শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি দেশে রয়েছে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে নানা রকম অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা। সেই সাথে বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাতো রয়েছেই। আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতি বছরই তার রূপ পরিবর্তন করে চলেছে।
একথা স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন উন্নতি করছে। ২০১৭ সালের জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি, আর অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে তা দৃশ্যমান। পাশের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু বিষয় এ অর্জনগুলোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৭ সালে নতুন বইয়ে ছিল হাজারো ভুলের সমাহার। এছাড়া ছবি ও বিষয়ের অসঙ্গতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এতসব কিছুর মাঝেও আশা করা হচ্ছিল, কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের দেশে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না।
পরের বছর নতুন বইয়ে আমূল পরিবর্তন আনা হল। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং ড. মুহাম্মদ কায়কোবাদসহ বিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিলেন বই লেখার দায়িত্ব। ফলে ২০১৭ সালের বই সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটাই দূর হল। বছরের দ্বিতীয় পরীক্ষায় বহু চেষ্টার পর প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হল এবং ফলাফলে পাশের হার নেমে এলো। অভিভাবকরা অবাক, জাতিও হতবাক!
এবার জিপিএ ব্যবস্থা নিয়ে একটু কথা বলব। প্রতিটি বিষয়ে ৮০% পাওয়ার জন্যে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন চুরি থেকে শুরু করে পরীক্ষার হলে বসে ডাকাতি করতেও দ্বিধা করে না। কারণ, পছন্দ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে এর চেয়ে কম নম্বর পাওয়া চলবে না।
ছোটবেলায় আমাদের একটি কথা শেখানো হয়, 'লেখাপড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে'। অর্থাৎ শুধু অর্থের জন্যেই লেখাপড়া করা এই মন্ত্রটি আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে জন্মের পর থেকেই ঢোকানো হয়েছে। এই বোধ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের পিছু ছাড়ে না। তাই সারাজীবনই আমাদের মূলমন্ত্র হলো- 'চাই চাই আরও চাই'।
তাই অপারগ হয়েই বলতে হয়, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের হজম শক্তি বেশ ভালো। তাই আমরা অনেক কিছুই হজম করতে সক্ষম। কিন্তু পাকস্থলী তো আর অক্ষয় কোম্পানি নয়, এক সময় তা বিগড়াবেই। ভয়টা ওখানেই। তখন একটি ব্যাধিগ্রস্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায় কেউ এড়াতে পারবে কি?