ক্রমশই নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। কৃষি প্রধান এই দেশে ভূগর্ভস্থ পানিরই কৃষি উৎপাদন সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। বাড়ছে খরচ। কিন্তু এই ভূ-গর্ভস্থ পানিরই যথেচ্ছ ব্যবহারে ভাবিয়ে তুলছে কৃষি বিশেষজ্ঞদের। কিভাবে এই ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে কাজ শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
ভূ-গর্ভস্থ পানির সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশের সেচ নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বরেন্দ্রসহ ১২ জেলার ১৫ টি উপজেলায় জরিপ কাজ শুরু হয়েছ। এর ফলোফলের ভিত্তিতে আমরা বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কর্মকর্তা এবং ড. আবদুছ ছালাম।
তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ভু-গর্ভস্থ পানির সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশের সেচ নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরা জন্য কাজ চলছে। তবে এটি এখন বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআরআই)। সমীক্ষার কাজ জুলাই ২০২০ এ শুরু হয়েছে যা শেষ হবে জুন ২০২৩।
তিনি বলেন, এটি একটি বড় কাজ। এর সঙ্গে সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করছে। অন্যগুলো হলো, বিএআরআরআই, বিএমডিএ, এবং বিএডিসি। যৌভভাবে পরিচালক এ কাজ টি শেষ হলে দেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়র তথা ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছা ব্যবহার, সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।
বিএআরআরআই প্রকল্প সূত্র জানায়, স্বল্প দক্ষ, স্বল্প উৎপাদনশীল ও অপচয়মূলক পানি ব্যবস্থাপনা থেকে উচ্চদক্ষ, উচ্চতর উৎপাদনশীল এবং কম অপচয়মূলক পানি ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রণোদনা তৈরীর ক্ষেত্রেনীতি নির্ধারণে সহায়তাকরণ,
৫টি অঙ্গভিত্তিক (পানির পরিমাণ ভিত্তিক সেচ চার্জ, স্মার্ট কার্ড, AWD প্রযুক্তি, পানি সরবরাহের দক্ষতা, কমিউনিটি ভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা, প্রস্তাবিত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিএমডিএ ও বিএডিসি এর গভীর নলকূপ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ, পানির সাশ্রয়, দক্ষতা ও উৎপাদনশীল বুদ্ধিকরণ
অগভীর নলকূপ এবং বেসরকারি খাতে গভীর নলকূপ সেচের উপর সমীক্ষা পরিচালনা করার জন্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সকল ক্ষেত্রে কিভাবে সেচ পানির বাজারকে আরো দুক্ষ ও উৎপাদনশীল করা যায় তা নিরূপণকরণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতেই সেচ দিতে হয়। এসব জমির শতকরা ১৫ ভাগে ভূ-উপরিস্থ এবং শতকরা ৮৫ ভাগে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৬ হাজার গভীর নলকূপ ও ১৬ লাখ অগভীর নলকূপ রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদন করতে মাটির প্রকারভেদে তিন থেকে পাঁচ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ পানির অর্ধেকেরও বেশি অপচয় হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, প্রচলিত সেচ ব্যবস্থাপনায় জমি ও ফসলে প্রকৃত চাহিদার চেয়েও দুই থেকে তিনগুণ বেশি পানি দেওয়া হয়। এতে পানির ব্যাপক অপচয় হয়। পানির এই অপচয় রোধে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানেকৃষকদের মাঝে ‘ফারো সেচ’ পদ্ধতি পরিচিতি পেয়েছে। যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে খুবই উপযোগী। এতে পানির অপচয় শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমানো যায়।