সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি। বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে ব্যাঘ্র প্রকল্পের গাইড হিসাবে প্রথমবারের মতো দেখা যাবে মহিলাদের। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুন্দরবনের গাইড হিসাবে কাজ করবেন চার নারী।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।
সুন্দরবন গহীন অরণ্য ও শ্বাপদসংকুল। পদে পদে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে বিপদ। রয়েছে প্রতিকূলতা। এমন একটা জায়গায় পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ভ্রমণ করানোর দায়িত্বটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। আর সেই কারণেই কেবলমাত্র পুরুষরাই সুযোগ পেতেন সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের গাইড হওয়ার। এর মধ্যে যে পুরুষতান্ত্রিকতার ছাপ লুকিয়ে রয়েছে, তা এক প্রকার স্পষ্টই। এক যুগ পেরিয়ে এসে এবার ভাঙল সেই অচলায়তন। প্রথমবারের জন্য সুন্দরবনে ব্যাঘ্র প্রকল্পের গাইড হিসাবে দেখা যাবে মহিলাদের।
সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে পাইলট— সমস্ত রকম কর্মক্ষেত্রেই বিশ্বজয় করেছেন মহিলারা। তবে গাইডের ভূমিকাতেই বা সুযোগ মিলবে না কেন তাদের? মাস কয়েক আগের কথা। এমন একটি চিন্তাভাবনা থেকেই মহিলা গাইড নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তিতে কতটা সাড়া মিলবে, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন আধিকারিকরাও। তাদের রীতিমতো চমকে দেয় আবেদনকারীর তালিকা। চ্যালেঞ্জিং এই কাজের জন্যই এগিয়ে আসেন সুন্দরবনেরই চার বাসিন্দা— মধুমিতা মণ্ডল, সুমনা মণ্ডল, বীথিকা রায় ও ভাস্বতী কামিলা সরকার।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুন্দরবনের গাইড হিসাবে দেখা যাবে তাদের। গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রেনিং দেওয়ার পর গাইড হিসাবে নিয়োগ করা হয় তাদের। পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তরের বিশেষ নৌকায় পর্যটকদের সুন্দরবনের টাইগার রিজার্ভ ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি তারা বর্ণনা দেবেন সুন্দরবনের ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক ভূমিকা এবং বৈচিত্র্যেরও।
সদ্য-নিয়োজিত গাইডদের জন্য বাংলা, হিন্দি এবং ইংরাজি— তিনটি ভাষারই প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি গাইডদের সুবিধার্থে বাংলা অনুবাদ করানো হচ্ছে প্রচলিত গাইডেন্স পুস্তিকারও। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে জানানো হয়েছে, বেতনের ক্ষেত্রেও সমানাধিকার পাবেন মহিলারা। প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে দেওয়া হবে তাদের।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, যেন এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে সুন্দরবনের ভারতীয় প্রান্তে। শুধু মহিলা ক্ষমতায়নই নয় বরং তার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়তে চলেছে প্রান্তিক অর্থনীতিতে এবং কর্মসংস্কৃতির প্রচলিত ধারণায়।