বিশ্বব্যাপি স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কথা বলার ইচ্ছা। সেই সঙ্গে পাল্টাচ্ছে কথা বলার মাধ্যমও। আগে মানুষ ডিরেক্ট ফোন টু ফোন কল করলেও এখন এসে গেছে অনেক অ্যাপস যার ফলে এখন আর ডিরেক্ট ভয়েস কল করতে হয়না। অ্যাপস ব্যবহার করেই মানুষ এখন শুধু ডাটা খরচ করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারছে। এরসঙ্গে ভিডিও কলিং যুক্ত হওয়ায় মানুষের নির্ভরতা দিন দিন অ্যাপস গুলোর উপরে বেড়েই চলেছে। কিন্তু সব অ্যাপসই ভালো সার্ভিস দিবে এমনটা নয়।
তাই আপনাদের জন্য খুঁজে ১০টি সেরা অ্যাপস এর তালিকা নিয়ে এসেছি।
হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জার: জনপ্রিয়তার দিক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জার বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত।ফেসবুক নিয়ন্ত্রণাধীন এই অ্যাপসটি ভয়েস ও ভিডিও কলিং ফিচারের জন্য খুবই প্রিয় ব্যবহারকারীদের কাছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ২জি নেটওয়ার্কেও এটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেয়। এছাড়াও গ্রুপ ভিডিও কলিং সুবিধায় ৪ জন বন্ধুর সঙ্গেও এটি দিয়ে কথা বলতে পারবেন। অ্যাপসের নির্মাতারা একে সর্বোচ্চ নিরাপদ বলে অভিহিত করেছে। কেননা এন্ডটু এন্ড এনক্রিপশনের কারণে দুইজন ইউজার ব্যাতিত আর কেউ ব্যবহারকারীর আদান প্রদান করা টেক্সট ও মেসেজ দেখতে পান না । তবে এর ড্রব্যাকস এর মধ্যে রয়েছে ইমেজ কোয়ালিটি কমে যাওয়া। যদিও তুলনামূলক ভাবে অন্যন্য ইন্সট্যান্ট মেসেজ সার্ভিসের থেকে এর ইমেজ কোয়ালিটি ভালো থাকে।
ভাইবারঃ বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয়তার দিক থেকে ভাইবার রয়েছে ২য় শীর্ষে । এর অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এটি শুধু মোবাইলেই নয় ব্যবহার করা যাবে ডেক্সটপেও।এটি উইন্ডোজ, ম্যাক, আইওএস এমনকি লিনাক্স সমর্থিত। এছাড়াও এন্ড্রয়েড চালিত স্মার্ট টিভি থাকলে বন্ধুর সাথে বিগ স্ক্রিনে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারবেন এই অ্যাপস দিয়ে।এটির আরেকটি মজার দিক হচ্ছে ২০০ বন্ধু নিয়ে আপনি এই অ্যাপস এ গ্রুপ চ্যাট করতে পারবেন।বাংলাদেশে অনেক বিজনেস গ্রুপ তাদের ভাইবার গ্রুপের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট সেবাও দিয়ে থাকে।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারঃ যদি আপনার ফেসবুকে অধিক ফ্রেন্ড থাকে তবে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট অপশন । কেননা আপনার আলাদা করে ফোন বুক সিংক করতে হবেনা ফেসবুকে লিস্টে থাকা ফ্রেন্ডদেরই কল করতে পারবেন নিশ্চিন্তে। ভিডিও গ্রুপ কলের মাধ্যেম ১৫ জনের সঙ্গে একসাথে কথা বলতে পারেন একজন ব্যবহারকারী। তাই কনফারেন্স কলিং এর ক্ষেত্রেও ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপস। এটিও মোবাইলে এবং ডেক্সটপে ব্যবহার করা যায়। সম্প্রতি সিক্রেট ম্যাসেজ সার্ভিসের কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার এর । এই ফিচার এর মাধ্যমে আপনি যে কোন বন্ধুকে ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি মেসেজ পাঠাতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পর মেসেজটি দুই দিক থেকেই মুছে যাবে। ফলে যে কোন গোপন তথ্যে দিলেও তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হবেন না ব্যবহারকারীরা।
উইচ্যাটঃ চিনা এই অ্যাপ্লিকেশনটি সেই দেশে খুবই জনপ্রিয় বলা যায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী । কেননা হেন কোন কাজ নেই এই অ্যাপসটি দিয়ে করা যায় না। গ্রুপ চ্যাট থেকে শুরু করে পেমেন্ট গেটওয়ে পর্যন্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন এর চীনা ব্যবহারকারীরা। তবে পেমেন্ট গেটওয়ে শুধু চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য দেশের গ্রাহকরা এর ভিডিও কলিং, ভয়েস কলিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মোমেন্টস এর মাধ্যমে যুক্ত থাকতে পারেন তার বন্ধুদের সাথে। মূলত চীন দেশে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকায় প্রায় একমাত্র উপায় হবার কারণে উই চ্যাট প্রচণ্ড জনপ্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী উচচ শিক্ষা অর্জনের জন্য চীন দেশে থাকায় উইচ্যাট এর জনপ্রিয়তা দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। এর মোমেন্টস ফিচারের মাধ্যমে প্রাইভেসি দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বন্ধুর সঙ্গেও আপনি আপনার মুহূর্ত শেয়ার করতে পারবেন।
লাইনঃ আরেকটি বহুল প্রচলিত ইন্সট্যান্ট চ্যাট ও ভয়েস কলিং অ্যাপস হচ্ছে লাইন। থাইল্যান্ডে জনপ্রিয় এই অ্যাপসটি উইন্ডোজ, ম্যাক , আইওএস সমর্থিত। তবে এটি কাজ করবে না লিন্যাক্সএ । এটিতেও ভয়েস কলিং, ভিডিও কলিং ও গ্রুপ কলিং এর ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও এতে নান ধরনের স্টিকার ব্যবহার করা যায় তাই চ্যাটিং এর সময়ে মুহূর্তগুলো আরো মজার করে তোলা যায় এই অ্যাপসে ।
ফেসটাইমঃ ল্যাগ বা বাফার ছাড়া ক্রিস্টাল ক্লিয়ার কথা বলতে চান । তাহলে আপনাকে বেছে নিতে হবে অ্যাপল এর ফেসটাইম ফিচারটি। শুনেই বুঝতে পারছেন এটি একমাত্র অ্যাপলের ফিচার।এর মাধ্যেম কেউ চাইলে ভিডিও কনফারেন্সিংও করতে পারেন । তবে এই জন্য দুই জনের দিকেই ওয়াইফাই কানেকশন থাকতে হবে আর মোবাইল ডাটা ইউজ করতে চাইলে নুন্যতম থ্রিজি প্রযুক্তি থাকা বাধ্যতামূলক ।
সিগন্যাল প্রাইভেট ম্যাসেঞ্জারঃ তথ্য এখন বিশ্বব্যাপি একটি অমূল্য সম্পদের মত । হ্যাকাররা মুখিয়ে থাকে কখন একটি অ্যাপস এর বাগ বের করে এর মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নেয়া যাবে। তাই দিন দিন প্রাইভেট ম্যাসেঞ্জার বা হাই অ্যাকুরেসি প্রাইভেসি সম্বলিত অ্যাপস গুলোর চাহিদা বেড়ে চলছে। সেই দিকটি মাথায় রেখে ব্যবহারকারীদের জন্য এসেছে সিগন্যাল প্রাইভেট ম্যাসেঞ্জার। এটি প্রাইভেট ম্যাসেঞ্জার শুধু টেক্সটই ইনক্রিপ্ট করে না বরং ভয়েস কলও ইনক্রিপ্ট করে পাঠায়। ফলে মাঝে পরে কারো সাধ্য নাই দুটি সিগন্যাল ডিভাইসের কথোপকথন রেকর্ড বা শোনার। আর এটিতেও ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি মেসেজ পাঠানো যায় এর পর সেই মেসেজটি দুদিক থেকেই মুছে যাবে। অ্যাপসটি ব্যবহার করতে হলে নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সারা বিশ্বে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাছে এই জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও সুইজারল্যান্ডে এই অ্যাপসটি বহুল জনপ্রিয়তা রয়েছে।
ইমোঃ ফোনে নেই থ্রি জি বা ফোর জি? কোন সমস্যা নেই আপনাদের জন্য আছে একটি অ্যাপস যা দিয়ে মাত্র ২ জি কানকেশন দিয়ে দুর্দান্ত চ্যাট করা সম্ভব। এটি এতই লাইটওয়েট একটি অ্যাপস যে আপনি ২জি কানেকশনেও এটি দিয়ে ভিডিও কল করতে পারবেন। তাই যে সব দেশে ও অঞ্চলে ইন্টারনেট এর কিছুটা দুর্বল সেসব জায়গায় ইমো প্রচণ্ড জনপ্রিয় একটি অ্যাপস। যেকোনো নেটওয়ার্কে সহজলভ্য হওয়ায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ওয়ার্কারদের কাছে এইটি বহু জনপ্রিয় একটি অ্যাপস।
কাকাওটকঃ সাউথ কোরিয়ান এই অ্যাপসটি দিয়ে আপনি আপনার বন্ধুকে ভিডিও ও অডিও কল করতে পারবেন। এই অ্যাপসটির মজার দিক হচ্ছে এর মাধ্যমে ভয়েস চেঞ্জ করে আপনি আপনার বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে পারবেন। বেনটেন, টকিং টম এর মত জনপ্রিয় ভয়েস চেঞ্জার অপশন পাবেন এই অ্যাপসটিতে।
গুগল ডুয়ো ও হ্যাংআউটঃ গুগল হ্যাংআউট এখন পর্যন্ত গুগলের বেস্ট ইন্সট্যান্ট চ্যাটও ভয়েস কলিং অ্যাপস। এটি কানাডা ও মার্কিং যুক্তরাষ্ট্রে এর জনপ্রিয়তা এতই তুঙ্গে যে এই দুটি দেশে গুগল হ্যাংআউট ব্যবহার করে সরাসরি নাম্বারে ফোন করা যায় কোন সার্ভিস চার্জ ছাড়াই। তবে এর জন্য থাকতে হবে গুগল ডায়ালা অ্যাপসও।
এছাড়াও ভিডিও কলিং বেসড অ্যাপস গুগল ডুয়ো দিয়ে বাফারিং ছাড়া ভিডিও কলিং করা যায়। বাফারিং ফ্রি ফিচারের জন্য রয়েছে এর জনপ্রিয়তা থাকলেও সম্প্রতি অডিও কলিং ফিচারও যুক্ত করা হয়েছে অ্যাপসটিতে।