প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ছিল দুর্দান্ত। ব্যাটিং ঝলক দেখিয়ে টাইগাররা গড়েছিল বিশাল সংগ্রহ। পুঁজি দাঁড়িয়েছিল ৩০০ টপকানো। কিন্তু দ্বিতীয় মাচে এসেই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখল দেশের ছেলেরা। টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জায় ডুবতে বসেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু শেষ দিকে আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সম্মানজনক স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ক্যাগিসো রাবাদা ধ্বংসাত্মক বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেয়ায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ১৯৪।
জোহানেসবার্গের দ্য ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগারদের শুরুটা ছিল যাচ্ছে তাই বাজে। দেশের ব্যাটিং লাইন-আপে প্রথম আঘাতটা হানেন লুঙ্গি এনগিদি। দলীয় ৭ রানে ওপেনার তামিম ইকবালকে ফেরান এ প্রোটিয়া পেসার। টাইগার ক্যাপ্টেনের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১ রান। এরপরই বল হাতে ঝড় তোলেন ক্যাগিসো রাবাদা। শুরু হয়ে যায় টাইগারদের আসা-যাওয়ার মিছিল। দলীয় ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান লিটন দাস ১৫ রান এনে দিলেও হতাশ করেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার ছয় বল মোকাবেলা করে রাবাদার শিকার হন রানের খাতা না খুলেই। মুশফিকুর রহিম ১১ ও ইয়াসির আলী রাব্বী পান মাত্র ২ রান।
পরে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। তবে রিয়াদ খুবি বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। ৪৪ বলে ৩ চারে ২৫ রান করেই রাবাদার বলে জানেমান মালানের হাতে উইকেট সঁপে দিয়ে ফেরেন তারকা এ অলরাউন্ডার। ফলে ১০০ রানের স্কোর ছোঁয়ার আগেই টাইগাররা হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। তবে ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদ-আফিফ জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৬০ রান (৮৭ বলে)।
অসাধারণ দৃঢ়তায় রিয়াদ ফিরলেও ব্যাট হাতে লড়াইটা চালিয়ে যান আফিফ। দুরন্ত ব্যাটিং ঝলক দেখিয়ে তরুণ এ অলরাউন্ডার আভাস দেন সেঞ্চুরির। কিন্তু দুর্ভাগ্য দাপুটে ব্যাটিং করেও জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখা পাননি আফিফ। ফিফটিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। সাজঘরের পথ ধরার আগে আফিফ ১০৭ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৭২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন আফিফ। আফগানদের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়া ব্যাটিং পার্টনারশিপের আভাস দিয়েছিলেন দুজনে। ধারাভাষ্যকাররা তেমনটাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু তারা তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে দুজনে সন্তুষ্ট থাকেন ৮৬ রানের (১১২ বলে) দুর্বার এক পার্টনারশিপের গল্প লিখে।
আফিফ হোসেন ক্রিজ থেকে বিদায় নেয়ার তার পার্টনার মেহেদী হাসান মিরাজও ফেরেন খুব দ্রুত। সঙ্গীকে হারিয়ে তিনিও খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আফিফ আউট হওয়ার দুই বল পর রাবাদার বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে আসেন মিরাজ। দলীয় স্কোরে যোগ করেন ৩৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তার ৪৯ বলের ইনিংসে ছিল চোখ ধাঁধানো একটি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কার মার। শরিফুল ইসলাম ২ রান নিয়ে ফিরলেও তাসকিন আহমেদ (৯*) ও মুস্তাফিজুর রহমান (২*) থেকে যান অপরাজিত।
স্বাগতিকদের হয়ে একাই পাঁচ উইকেট শিকার করেন ক্যাগিসো রাবাদা। এনিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব ছুঁলেন। টাইগারদের ধসিয়ে দেওয়া আগুনে বোলিং স্পেলে তারকা এ পেসার খরচ করেন ৩৯ রান। তার সঙ্গে একটি করে উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিদি, ওয়েন পার্নেল, তাবরাইজ শামসি ও রসি ভ্যান ডার ডুসেন।