ব্যাট হাতে মাঠে নামতেই ছন্দ ছাড়া হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই বাজে ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসে। দলীয় ১১ রানে ৪ উইকেট, পরে ২৭ রানে নাই হয়ে ৫ উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট আগুনে বোলিংয়ে একাই ফেলে দেন পাঁচ উইকেট। তার সঙ্গে বিধ্বংসী বোলিংয়ে সামিল হন টিম সাউদি আর কাইল জেমিসন। তাদের বোলিং তোপের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি মুমিনুল হকের দল। এলোমেলো ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ৪১.২ ওভারেই ১২৬ রানেই গুটিয়ে গেছে টাইগাররা। পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি। ফলে ৩৯৫ রানে পিছিয়ে এখন অতিথিরা।
দলের মহাবিপদের সময় সাহস দেখিয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। ধ্বংসস্তূপের মাঝে আশার আলো জাগিয়ে ইয়াসির আলীর সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। বিপর্যয় আর ফলো অনের শঙ্কা কাটিয়ে উঠার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু নাহ। তেমন কিছু হয়নি। বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি তাদের জুটি। দুজনে মিলে দলীয় স্কোরে যোগ করেন ৬০ রান (১০৭ বলে)।
সোহান ফিফটি মিস করেন ৯ রানের জন্য। ৬২ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪১ রান নিয়ে টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ'র ফাঁদে পা দিয়ে ফেরেন তিনি। সোহান না পারলেও ঠিকই ফিফটি পেয়েছেন ইয়াসির আলী। ৯৫ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫৫ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন তিনি। বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউ দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। মোহাম্মদ নাঈম ও ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক শূন্য রানে সাজঘরের পথ ধরেন। রানের খাতা না খুললেও অপরাজিত থেকে যান এবাদত হোসেন।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে একাই পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। এতেই চতুর্থ কিউই বোলার হিসেবে টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলকে নাম লিখেছেন তারকা এ পেসার। সঙ্গে তিনটি পেয়েছেন টিম সাউদি। আর দুটি উইকেট গেছে কাইল জেমিসনের পকেটে।
টাইগারদের প্রথম ইনিংস শেষ হতেই দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। ক্রাইস্টচার্চে তৃতীয় দিন সকালেই জানা যাবে বাংলাদেশকে ফলো অনে পাঠাবে কিনা কিউইরা। স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা রস টেলরের এটা বিদায়ী টেস্ট। ব্যাট করলে তার কাছ থেকে ভালো একটি ইনিংস আসতে পারে। তাছাড়া জয়ের সুবাস তো পেয়েই গেছে ব্ল্যাক ক্যাপস শিবির।
দুরন্ত ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন টম লাথাম। ডাবল সেঞ্চুরিকে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। তারকা এ কিউই ওপেনারকে ক্রিজ থেকে বিদায় করেন মুমিনুল হক। ফেরার আগে ৩৭৩ বলে ৩৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ২৫২ রানের অনন্য এক ক্রিকেটীয় ইনিংস খেলেছেন লাথাম। তাতেই ৬ উইকেটে ৫২১ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড।
প্রথম দিন থেকেই দুরন্ত ব্যাটিং করে যাচ্ছেন টম লাথাম। ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট শতক হাঁকিয়ে এগিয়ে ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির পথে। দ্বিতীয় দিনে এসে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্বিশতকটা ঠিকই ছুঁয়ে ফেলেন এ তারকা কিউই ওপেনার। উইল ইয়াংর হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ১৪৮ রান (২২৮ বলে) । সঙ্গে তার দল নিউজিল্যান্ড পৌঁছে যায় রান পাহাড়ে।
ফিফটি হাঁকিয়ে টম ব্লান্ডেল থেকে যান অপরাজিত। ৬০ বলে আট বাউন্ডারিতে খেলেন ৫৭* রানের দুরন্ত এক ইনিংস। আর ২৮ রান করে এবাদত হোসেনের বলে শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বিদায়ী টেস্ট খেলা রস টেলর। হেনরি নিকোলসকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন এবাদত হোসেন।
প্রথম দিনের দাপুটে ব্যাটিং ফর্মটা দ্বিতীয় দিনেও বিয়ে নিয়ে আসেন ভেভন কনওয়ে। দুরন্ত ব্যাটিংয়ে টেস্টে তৃতীয় শতক হাঁকান ওয়ানডাউনে নামা তারকা এ ব্যাটসম্যান। তবে খুব বেশি দূর আগাতে পারেননি। ১৬৬ বলে ১২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ১০৯ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান কনওয়ে। তাকে রান আউট করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার আগে এবাদত হোসেনের ওভারে দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই চার মেরে জাদুকরী তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন কনওয়ে। দ্বিতীয় উইকেটের পার্টনারশিপে লাথামের সঙ্গে মিলে এনে দেন ২১৫ রান (৩৪৩ বলে)।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন। বাকি উইকেটটি যায় মুমিনুল হকের পকেটে। দ্বিতীয় দিনে ১৭২ রান দিয়ে টাইগাররা পায় ৫ উইকেট। অথচ প্রথম দিন তারা পেয়েছিল মাত্র এক উইকেট।
প্রথম ইনিংসে এক উইকেটে ৩৪৯ রান নিয়ে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। টম লাথাম দিনের খেলা শুরু করেন ১৮৬ রান নিয়ে। আর কনওয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন ৯৯ রান নিয়ে।