শুরুতে ব্যাট হাতে জ্বললেন লিটন দাস। আদায় করে নিলেন দাপুটে এক সেঞ্চুরি। পরে বল হাতে ঘূর্ণি জাদু দেখালেন সাকিব আল হাসান। দুজনের বাট-বলের দুরন্ত পারফরম্যান্সে প্রথম ওয়ানডেতে বড় জয় পেল বাংলাদেশ।
স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে ১৫৫ রানে হারিয়ে দিল অতিথি টাইগাররা। মাশরাফি বিন মর্তুজাকে (২৭০ উইকেট) টপকে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারী বনে যাওয়ার ম্যাচে সাকিব (২৭৪ উইকেট) একাই শিকার করলেন ৫ উইকেট। এ নিয়ে একদিনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি তৃতীয়বারের মতো।
দুর্বার এ জয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশ পেল মূল্যবান আরও দশটি পয়েন্ট। ১০ ম্যাচ খেলে ৬ জয় ও ৪ হারে সব মিলিয়ে ৬০ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এখন বাংলাদেশ। সঙ্গে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ১৫ ওয়ানডে জিতল তামিম ইকবালরা। যার ১৪ জয় এসেছে বাংলাদেশের মাটিতে। বাকি একটি জয় এলো জিম্বাবুয়ের মাটিতে।
জিম্বাবুয়ের মাটিতে তাদের সর্বনিম্ন রানে অলআউট করার দিনে সর্বোচ্চ জয়ও পেয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বুলাওয়েতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৪৮। রানের দিক থেকে জিম্বাবুয়ের মাটিতে বাংলাদেশের আগের বড় জয়টি ধরা দিয়েছিল ওই ম্যাচেই। ১২১ রানে।
২৭৭ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে করতে নেমে ব্যাটিংয়ে শুরুটা মোটেল ভালো করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪ রানে হারায় তারা প্রথম উইকেট।
ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দিতে না পেরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফ্রিকান দলটি। সাকিবের স্পিন বিষ হজম করতে না পেরে ১০৫ রান তুলতেই নাই হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ৬ উইকেট।
ব্যাটিং ধ্বংস্তুপের মাঝে মশাল হয়ে আলো ছড়ায় কেবল রেগিস চাকাভার ব্যাট। তবে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৫৪ রানের চমৎকার এক ক্রিকেটীয় ইনিংস খেলে সাকিবের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন চাকাভা।
বাকি ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মধ্যে ক্যাপ্টেন টেলর ২৪ ও ডিওন মেয়ার্স ১৮ রান যোগ করেন। জিম্বাবুয়ে ২৮.৫ ওভারে গুটিয়ে গেছে ১২১ রানে। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া টিমাইসেন মারুমা অবশ্য শেষ দিকে ব্যাটিং করেননি।
লিটন দাসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের সামনে ২৭৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে টাইগাররা। দাপুটে ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান লিটন দাস। ১০২ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন এ ওপেনার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ শতক। ৩৩ রান নিয়ে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তবে পাঁচ রানের জন্য হাফ-সেঞ্চুরি মিস করেছেন আফিফ হোসেন (৪৫)। ২৬ রান যোগ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তামিম ইকবাল (০) ও সাকিব আল হাসানের (১৯) পর আউট হয়ে ফিরেন মোহাম্মদ মিঠুন (১৯) ও মোসাদ্দেক হোসেন (৫)। দলীয় এক রানের মাথায় সাজঘরের পথ ধরেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সাত বল মোকাবেলা করে শূন্য রানে ফিরলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। তার পর উইকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন সাকিব আল হাসানও। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার করেছেন ১৯ রান।
জিম্বাবুয়ের হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেছেন লুক জঙ্গে। দুটি করে উইকেট নেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনাগারাভা।
তার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে টস ভাগ্য সহায় হয়নি ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের। ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর টস জিতে বোলিং বেছে নেন। তাই হারারে স্পোর্টস ক্লাবে শুরুতে ব্যাট হাতে মাঠে নামে টাইগাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৭৬/৯, ৫০ ওভার (লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬; মুজরাবানি ২/৪৭, এনগারাভা ২/৬১, জঙ্গুয়ে ৩/৫১)।
জিম্বাবুয়ে: ১২১, ২৮.৫ ওভার (টেলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪; তাসকিন ১/২২, সাইফ ১/২৩, সাকিব ৫/৩০ ও শরিফুল ১/২৮)।
ফল: বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ম্যাচ সেরা: লিটন দাস।