ঢাকা: আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও স্পষ্ট যে, বিএনপির পক্ষ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের একটি প্রস্তাব যুক্তফ্রন্ট, গণফোরামসহ ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ইতোমধ্যে পৌঁছেছে। বিএনপি কৌশলগত কারণে বিষয়টি প্রকাশ করেনি বলছে দলের সিনিয়র নেতারা।
জানা গেছে, চলতি মাসের ১১ আগস্ট ও ১৩ আগস্ট দুদিনের জরুরি বৈঠকে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় ১০ দফা প্রস্তাব চুড়ান্ত করে।
বিএনপির দেয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা সমালোচনা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। দু-একটি দল এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও অনেকে দেখছেন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।
বিএনপির ১০ দফা প্রস্তাবের প্রথম দফায় রয়েছে- ’বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নি:শর্ত মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা।’
যেহেতু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি আছেন সেহেতু তার মুক্তি বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল দাবি হতে পারে না এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ।
দীর্ঘদিন ধরে ঐক্য প্রক্রিয়ার কথা শোনা গেলেও কার্যত দেখা যায়নি এসব উদ্যোগের। বিশেষ করে নির্বাচনের আগেই কেবল ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তেমনিভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর জোরে শোরেই বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামে দলটি। নির্বাচন যতই সামনে আসছে ততই আলোচনার তোড়জোড় বাড়ছে।
ঐক্য কিসের ভিত্তিতে হবে? তার ধরণ কেমন হবে? এ নিয়ে নানা কল্পনা জল্পনার মাঝে বিএনপির ১০ দফা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে রাজনীতির মেরুকরণে।
সূত্র বলছে, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির প্রস্তাবের সঙ্গে অনেকটা একমত হলেও দু একটি বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে যুক্তফ্রন্টের।
এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও যুক্তফ্রন্ট্রের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্যের ভিত্তিতে ঐক্য হতে হবে। কিন্তু তা কিভাবে হবে আলোচনা করে নিশ্চিত হতে হবে। কোন দল ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী এককভাবে ক্ষমতায় না আসতে পারে। সেজন্য আমরা বলছি ভারসাম্যের ভিত্তিতে ঐক্য হতে হবে। এবং তার যে নিশ্চয়তা সেটা আগেই জানাতে হবে।
সম্প্রতি, এক আলোচনা সভায় বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছিলেন, ’দেশে এমন একটি সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে যারা দু পক্ষকেই সামলাতে পারবে। কেউ যদি অনিয়ম করো, মানুষ হত্যা করো তাহলে তোমরা গোল্লায় যাও। আমরা তোমাদের সঙ্গে নেই।’ এছাড়াও তিনি ভারসাম্যের ভিত্তিতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কথা বলেছিলেন।
এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ১০ দফাকে বলা হচ্ছে ‘ঐক্য প্রক্রিয়ার এক্সারসাইজ’। প্রয়োজন অনুসারে এটিকে সংযোজন ও বিয়োজন করা হতে পারে। সবার মতামতের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, বিএনপির দেয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে পর্যালোচনায় বসতে যাচ্ছে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে আসম আব্দুর রবের থাকার বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।
বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো প্রস্তাবের শিরোনামে উল্লেখ রয়েছে, ‘বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নিম্ন উল্লেখিত দাবিগুলোর ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নিশঃর্ত মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা। একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান। রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারায় বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্রকে ক্ষমতার গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য।
এছাড়াও রয়েছে, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করা। দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে কার্যকর করা। সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা। সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয়ের বৈষম্যের অবসান ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।