ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সারাদেশের সাংগঠনিক বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম।
সম্ভাব্য আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে রেখে মতামত ও পরামর্শের জন্য সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। যেখানে প্রতিটি জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত হন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ডেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সাংগঠনিক তৎপরতাসহ নানা বিষয়ে জানতে চায় সিনিয়র নেতারা। এসময় তৃণমূল নেতাদের অধিকাংশই চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্দোলনের পক্ষে মত দেন।
তৃণমূল নেতারা মনে করে, দল থেকে দূরে রাখতে ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাইরে রাখতেই খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে। তার মামলা যেহেতু রাজনৈতিক, তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন খুব কাছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে ডু অর ডাই আন্দোলন করতে হবে।
এছাড়া খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে, সংসদ বহাল রেখে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে গেলে তার পরিণতি কী হবে তা বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রমাণিত। তাই যেকোনো মূল্যে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আন্দোলনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে তৃণমূল।
বিএনপির তৃণমূলের নেতারা নিজেদের মতামত ও দাবি দাওয়া জানানোর পর সে বিষয়ে সিনিয়র নেতারা তাদের আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে আন্দোলনের ডাক আসতে পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পর্যায়ক্রমে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসতে চায় তারা। এরপর সকলের পরামর্শ লিখিত আকারে পাঠানো হবে সুদূর লন্ডনে। সেখানে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সেখান থেকেই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমনটি শোনা গেলেও বিএনপি চলছে যৌথ নেতৃত্বে। যার মূলে রয়েছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চেষ্টা চালাচ্ছেন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের বাইরে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে। তবে ‘ভারসাম্যের ভিত্তিতে সমঝোতার’ প্রশ্নে বিলম্বিত হচ্ছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। সেখানে আসন ভাগাভাগি ও পদ পদবি নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের আলোচনা চলমান আছে। অগ্রগতির ব্যাপারটা বলা মুশকিল। আমরা বলেছি কোনো একক ব্যক্তি যেন ক্ষমতা দখল না করতে পারে। তাই আমরা ভারসাম্যের ভিত্তিতে সমঝোতা চাই। ক্ষমতায় চলে গেলে আমাদেরকে যে মান্য করবে, মূল্যায়ন করবে তার গ্যারান্টি কী? এই বিষয়গুলো যত তাড়াতাড়ি ক্লিয়ার হবে, তত তাড়াতাড়ি একমত হওয়া সম্ভব হবে।’
শনিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেয়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে পারছেন না। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমাদের নেতাকর্মীরা হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার। এমতাবস্থায় আমরা নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। নির্দেশনা আসা মাত্রই আমরা তা বাস্তবায়ন করব।’
মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুন বলেন, ‘আমরা তৃণমূলের দাবি হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। আমি মনে করি নেত্রীকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। আমরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছি।’
যশোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামছুল হুদা বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম খুন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এবারের নির্বাচনে যদি বিজয় অর্জন করতে না পারি তাহলে আমরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ব। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও আমাদের আন্দোলন করা উচিত। আমাদের পেছনে ফেরার সময় নেই।’
রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, ‘সিনিয়র নেতারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়। আমরা আমাদের মতো করে মতামত দিয়েছি। এ আলোচনায় একটা বিষয় উঠে এসেছে তা হল খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না। নেতারা আমাদের কথা শুনেছেন। আন্দোলনের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে না বলা হলেও তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে আন্দোলন হতে পারে। সে জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকে।’
বিএনপির সম্ভাব্য আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনু মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিএনপি মুখে যতই আন্দোলনের কথা বলুক না কেন আমার মনে হয় না আন্দোলন করার মতো সক্ষমতা তাদের আছে। তাদের এই কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হল দলের নেতাকর্মীদেরকে চাঙ্গা রাখা। মনে মনে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিই নিচ্ছে। নির্বাচনের বিকল্প তাদের উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না।’