জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেছেন, আমাদের দলের মধ্যে সরকারি দলের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের দল করে কিন্তু রাজনীতি করে অন্য দলের।
শনিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে নিজ জন্মদিনের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন।
জিএম কাদের আরও বলেন, আমাদের দল করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয় কিন্তু রাজনীতি করার সময় তারা সরকারি দলের রাজনীতি করে। যখনই আমরা সঠিক রাজনীতি করতে চাই, তখনই আমাদের দলকে ভেঙে আরেকটি দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এটা সরকারই করে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে না পারি। আগে আমরা পরজীবী হলেও আমাদের একটা পছন্দ ছিলো, আমরা যেকোন পক্ষে যেতে পারি, আমাদের বার্গেনিং পয়েন্ট ছিলো। এখন আমরা বন্দি হয়ে গেছি, একজনের কাছেই যেতে হবে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই.... একজন একটা ডাক দেবেন, সরকার মদদ দেবেন, মিডিয়া কাভারেজ দেবে আর আমাদের দল ভেঙে আইনের মাধ্যমে লাঙ্গল নিয়ে নেয়ার হুমকী দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, দল বাঁচাই না রাজনীতি বাঁচাই এই সমস্যায় জাতীয় পার্টি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমরা লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকতে পারি না। আমাদের দলে থেকে যারা অন্য দলের রাজনীতি করে তাদের আমরা দল থেকে বের করে দিতে পারি না। রাজনীতি বাঁচাতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। সরকার আমাদের দুর্বল করতে আমাদের মাঝেই একটি জোট বানিয়ে রাখছে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই সরকার আমাদের দল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। যারা জাতীয় পার্টি ব্যবহার করে অন্য দলের রাজনীতি করতে চায় তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। এটা করতে পারলেই জাতীয় পার্টি টিকবে।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে আমাদের দেশের দলগুলো টিকতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা জুলুম-নির্যাতন করে আমাদের রাজনীতি করতে দেয়নি। যারা ক্ষমতাসীন দল করতে এসেছিলো তারা নব্বই সালের পর দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা দল বা দেশের স্বার্থ দেখেনি।
২০০৮ সালে যখন আমরা মহাজোট করেছি, তখন অনেকেই বলেছে, আমরা পরজীবী হয়ে গেছি। তারা বলেছেন, আমরা নাকি অন্যের সহায়তা ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হতে পারিনা। দেশের বড় দুটি দলের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় নির্ধারণ হয়। সেই অল্প ভোট তো আমরা দিতে পারতাম। আমরা যদি পরজীবী হই তারপরও আমাদের কাছে টানতে প্রতিযোগিতা ছিলো। সেখানে আমাদের একটি বার্গেনিং পয়েন্ট ছিলো, আমরা বার্গেনিং করে অনেক কিছু আদায় করতে পারতাম। ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা বার্গেনিং করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের বলা হয় গৃহপালিত রাজনৈতিক দল। দেশও জাতির কাছে গৃহপালিত বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা নেই।
আমরা একটি দলের কাছে বন্দি হয়ে গেলে জনগণের কাছে আমাদের প্রয়োজন থাকবে না। আর জনগণ কেন এমন দলকে ভোট দেবে? দলকে বাঁচাতে হলে গৃহপালিত অপবাদ থেকে বের হতে হবে। যারা গৃহপালিত হবার জন্য দায়ী তাদের বর্জন করতে হবে। আমাদের দলে থেকে অন্যদলের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। সরকারকে অনুরোধ করবো দেশের রাজনীতি শেষ করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেন। সবাইকে ধ্বংস করে সরকার একক রাজনীতি করবে এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।
তিনি বলেন, আরো কিছু দিন পরে আমার সঠিক মূল্যায়ন হবে। এখন যারা আমাকে মূল্যায়ন করছেন সেটা হয়তো সঠিক হচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
গেলো নির্বাচনে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। দেখেছি... রাজনীতি কত বেশি নোংরা হতে পারে আবার কত বেশি মহৎ হতে পারে। দেখেছি, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মানুষ কত বেশি নিচে নেমে যেতে পারে। দেখেছি, দেশ ও জাতির জন্য মানুষ কত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। এগুলো আমার চলার পথে পাথেও হয়ে থাকবে।
জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর এর আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহ্বায়ক এ্যাড. সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদের, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর এর সকল থানার নেতৃবৃন্দ।