জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বুধবার (১০ জানুয়ারি) শপথ নিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সংসদীয় দলের সভা ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকের পর শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান ঢাকার বাইরে থাকায় ১০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন না দলীয় সংসদ সদস্যরা। পরদিন ১১ জানুয়ারি সংসদ ভবনের বিরোধীদলীয় উপনেতার কার্যালৈয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তারপর বলা যাবে কখন শপথ নেবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণের জন্য ১০ জানুয়ারি সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে শপথ পড়াবেন একাদশ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পার্টি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার শপথ না নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পার্টির পক্ষ থেকে স্পিকারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনসহ ২৬৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ১১টি আসনে বিজয়ী হন দলটির প্রার্থীরা। উন্মুক্ত কোন আসনেই জয়ী হতে পারেননি দলের নেতারা।
একাদশ সংসদের তুলনায় আসন সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে জাতীয় পার্টির। একাদশে ২২টি আসনে জিতলেও এবার মাত্র ১১ আসনে জিতেছে। কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের দিনেও ১১ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জাপার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হলেন-
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুর-৩ (সদর), মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল), সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ), প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা), প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ- রাণীশংকৈল), একেএম সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর), একেএম মোস্তাফিজুর রহমান কুড়িগ্রাম-১ (ভুরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী), আশরাফুজ্জামান আশু সাতক্ষীরা-২ (সদর), শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের আসনে থাকা দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এত নাজুক ফলাফলের মুখোমুখি হয় নি। ২০০১ সালে সবচেয়ে কম আসন ১৪টি পেয়েছিল জাপা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম জোটগতভাবে নির্বাচন করে ২০০৮ সালে। ওই নির্বাচনে ২৭ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন দলটির প্রার্থীরা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ২০ জন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে আরও ১৩ জনসহ ৩৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ, সব মিলিয়ে ২৭৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এরমধ্যে জোটগতভাবে ২১টি আরও উন্মুক্ত থেকে একটি আসনে বিজয়ী হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
এবারের নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন ছিল জাতীয় পার্টির ভূমিকা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দলটির অবস্থান ছিল রহস্যজনক। ইলেকশন কমিশন ১৫ নভেম্বর তফসিল দিলেও নির্বাচন প্রশ্নে পার্টির অবস্থান ঝুলে রাখা হয় ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি তখনও অন্ধকারে রাখা হয়।