মানিকগঞ্জে ফুরফুরে জাহিদ মালেক, মহা-চিন্তায় মমতাজ-রুবেল

, রাজনীতি

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ | 2024-01-01 18:42:13

রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জে সংসদীয় আসন রয়েছে মোট তিনটি। এই আসনগুলো থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ২০ জন প্রার্থী। তবে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে হাতেগোনা কয়েকজন। নির্বাচনী মাঠে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে জাহিদ মালেক।

অপরদিকে মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে মহাচিন্তায় রয়েছে নৌকা মনোনীত প্রার্থী দু’বারের সংসদ সদস্য জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। একইভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বিপাকে রয়েছে জোট মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেল। মানিকগঞ্জ-১ ও ২ আসনে জোট প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস রয়েছে নির্বাচনী এলাকায়।

মানিকগঞ্জ-১

ঘিওর-দৌলতপুর-শিবালয় উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন গঠিত। নদী ভাঙন কবলিত এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে মাঠ-ঘাট চষে বেড়ান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আবদুস সালাম। তবে শেষদিকে জোটগত কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতাকে।

এখানে নৌকার বদলে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন জহিরুল আলম রুবেল। এরপর নামমাত্র প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন তিনি। লাঙ্গল প্রতীকের রুবেল ছাড়াও এখানে মাঠে রয়েছে আরও তিন প্রার্থী। নির্বাচনী মাঠে সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের ঈগলের সঙ্গে লাঙ্গলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে এলাকায় হাওয়া বইছে।

এলাকার একাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠের প্রচার-প্রচারণায় রয়েছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ। গতবারের ন্যায় এবারও নৌকার মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন তিনি। তবে দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এবার ঈগল প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন তিনি।

জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রায় সকল নেতাকর্মীরাই তার সঙ্গে রয়েছেন খানিকটা প্রকাশ্যেই। তবে দলীয় কারণে দু’একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মী লাঙ্গল প্রতীকের সঙ্গে রয়েছে। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় লাঙ্গলের চেয়ে ঈগল বহুগুণে এগিয়ে রয়েছে বলে সাধারণ ভোটারদের অভিমত।

নির্বাচনী বিষয়ে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ বলেন, ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের ডাকে সারা দেওয়ার কারণে সাধারণ ভোটারেরা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অপরদিকে লাঙ্গল প্রতীকের জহিরুল আলম রুবেল বলেন, জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকার সমস্ত ভোটের প্রত্যাশা করেন তিনি। নির্বাচনী মাঠে তিনি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান।

মানিকগঞ্জ-২

সিংগাইর-হরিরামপুর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল-হাটিপাড়া-ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসন গঠিত। এই আসনে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমসহ মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে এই আসনে। তবে মমতাজের নৌকা ডুবাতে রয়েছে হেভিওয়েটের তিন প্রার্থী।

নির্বাচনী সবশেষ জরিপে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে ট্রাক প্রতীকের দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। এলাকায় তিনি দানবীর হিসেবেও খ্যাত। গেল কয়েকদিন ধরে নৌকা এবং ট্রাক প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। ট্রাক ছাড়াও এই আসনে নিজ দলেরই রয়েছে হেভিওয়েট আরও দুই প্রার্থী।

জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য, সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে মনোমালিন্য এবং হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ রয়েছে মমতাজ বেগমের। নৌকা ডুবাতে প্রকাশ্যে ট্রাক প্রতীকের হয়ে মাঠের প্রচার-প্রচারণায় রয়েছে দেওয়ান সাইদুর রহমানসহ সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতাকর্মীরা।

সবশেষ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ অহমেদ টুলু বলেন, ব্যক্তি অর্থায়ানে নির্বাচনী এলাকায় অসহায় হাজার হাজার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। যে কারণে তার ট্রাক প্রতীক নিয়ে সেচ্ছায় শ্রম দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তার কর্মীরা। সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হবেন বলে মন্তব্য করেন।

তবে দু’বারের সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের মমতাজ বেগম বলেন, নির্বাচনে যে যার সঙ্গেই চলাফেরা করুক, ভোট দেওয়ার সময় নৌকার বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ভোট দিবে না। কাজেই সব চক্রান্তের অবসান ঘটিয়ে ৭ তারিখের নির্বাচনে নৌকা মার্কাকেই মানুষ বিজয়ী করবে বলে মন্তব্য করেন।

মানিকগঞ্জ-৩

সাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে মানিকগঞ্জ-৩ নির্বাচনী আসন গঠিত। এই আসনে এবারো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জাহিদ মালেক। শুরু থেকেই ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অসংখ্য নেতাকর্মী ছাড়াও পরিবারের স্বজনেরা অংশ নিয়েছেন নৌকার প্রচার-প্রচারণায়। পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।

জাহিদ মালেক ছাড়াও এই আসনে প্রার্থী রয়েছে আরও ৫ জন। তবে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই তাদের কারোরই। উদীয়মান সূর্য প্রতীকে মফিজুল ইসলাম খান কামাল কিছুটা প্রচার-প্রচারণা করলেও অনেক প্রার্থী এখনো পোস্টার পর্যন্ত সাঁটায়নি পুরো নির্বাচনী এলাকায়। যে কারণে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে নৌকা প্রতীকের জাহিদ মালেক।

নির্বাচনী সার্বিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৫ জন। পুরো নির্বাচনী এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে মানিকগঞ্জে নির্বাচনী পরিস্থিতি খুব সন্তোষজনক বলে মনে করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর