জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও দলীয় প্রার্থীদের সাক্ষাৎ দেননি দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। ক্ষুব্ধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় চল্লিশ জন ঢাকার মোহাম্মদপুরে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টুর কার্যালয়ে। বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ওই বৈঠকটি। এসময় বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে একমত হন প্রার্থীরা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক প্রার্থী বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিষয়টি বৈঠকের মতো না। অনেক প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবকে পাচ্ছেন না। তারা এসেছিলেন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। চেয়ারম্যান ঢাকায় এসেছেন, মহাসচিব রাতে ঢাকায় ফিরবেন। কাল তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে।
কতজন প্রার্থী এসেছিলেন আর নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ২২ জনের মতো প্রার্থী আমার অফিসে এসেছিলেন। তারা ঢাকায় অবস্থান করছে বিষয়টি এমন না। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো, তারা নির্বাচনী এলাকায় আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। যখন ওই ঘোষণা আসে তখন আর প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না। ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন ২৬ আসনের বাইরে থাকা সাধারণ প্রার্থীরা। ওই প্রার্থীরা মনে করছেন, তাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি এখন শুধুমাত্র নির্বাচনে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে। সে কারণে তারা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রচারণা চালাতে রাজি নন। পার্টি তহবিল দিলে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন, না হলে সরে যাবেন।
প্রথম কয়েকদিন মনে করেছিলেন পার্টির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। কিন্তু সে আশা পূরণ না হওয়ায় যোগাযোগ শুরু করেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। এতে কোন সুরাহা না হওয়ায় প্রার্থীরা এলাকা ছেড়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় বনানীতে ভিড় করতে শুরু করেন। দিন যতো গড়াচ্ছে নতুন নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে এই তালিকায়। ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বরও প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থীকে বনানী অফিসে দেখা গেছে।
পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু তাদের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করায় কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলেন তারা। তবে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর পৌঁনে ২টায় বনানী অফিসে উপস্থিত হন পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। অফিসে আসার পর পরই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ভিড় জমান প্রার্থীরা। তবে তাদের কাউকেই সাক্ষাৎ দেননি জিএম কাদের। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের মাধ্যমে জানানো হয়, আগামীকাল (২৭ ডিসেম্বর) পার্টির মহাসচিব এলে তাদের দাবির বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। বিকেল পৌঁনে ৫টায় বনানী অফিস থেকে বেরিয়ে যান জাপা চেয়ারম্যান।
নোয়াখালী জেলার একটি আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাই। পার্টি নির্বাচনী তহবিল দিলে আছি, না হলে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো। সেখানে হয়তো ৫০ থেকে ৭০ জন প্রার্থী হাজির থাকতে পারেন। এমনকি এই সংখ্যা শতক পার হয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জনই সরে যেতে চান।
তিনি বলেন, ভোট চাইতে গেলে লোকজন বলে আপনারা কেনো ভোট চান। জাতীয় পার্টিতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। ২৬ জনের বিজয় নিশ্চিত করতে গিয়ে আমাদের বলি দেওয়া হয়েছে। এখন নিজের টাকা খরচ করবো কেনো। এখন সরে গেলে অর্থ লোকসান থেকে বেঁচে যাবো।মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত আমাদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল। নির্বাচন যাবো কিনা সেই সিদ্ধান্ত ঝুলে রাখা হয়। এ কারণেও আমরা মাঠে পিছিয়ে পড়েছি।
ইতোমধ্যেই জাতীয় পার্টির ৩ জন প্রার্থী সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাকির হোসেন। জাতীয় পার্টির রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে ছিলাম বেশ কয়েকটি নির্বাচনী অফিস করেছিলাম। নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার পর থেকে সব শেষ হয়ে গেছে।
নির্বাচন মনিটরিং কমিটি সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বেশিরভাগ ফোন আসছে নির্বাচনী খরচের টাকা দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে জানার জন্য। এখনও তহবিল বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পার্টি ফান্ড দেবে এটাও সিদ্ধান্ত হয়নি, আবার দেবে না এমন সিদ্ধান্তও হয়নি।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, হ্যাঁ এ কথা সঠিক কিছু প্রার্থী বনানী অফিসে আসছেন। তারা পার্টির সার্পোট পাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিতে চাচ্ছেন।
১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে নাটকীয়তা। শেষ মুহূর্তে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপা। একই সময়ে আওয়ামী লীগ পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে জাপাকে ২৬ আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সিনিয়র নেতা এবং বর্তমান কয়েকজন এমপি সমঝোতার তালিকায় না থাকা, বিপরীতে জিএম কাদেরের সহধর্মিনীর ঢাকা-১৮ আসন পাওয়া নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েছে।
এমনিতেই জাপায় নেতৃত্ব সংকট প্রকট হচ্ছে। তারমধ্যে এসব প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নিষ্ক্রিয় হলে পার্টির জন্য বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।