জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করলে, সরকারিভাবে বেকার ভাতা চালু, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দপ্তর উপজেলা পর্যায়ে স্থাপন করতে চায়। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে দলটির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে।
চব্বিশ দফা ইশতেহারে অনেকগুলো উপ-দফা রয়েছে। পুরাতন অধিকাংশ প্রতিশ্রুতির সঙ্গে নতুন কয়েকটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে আরও রয়েছে, বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১০ লাখ লোকের স্থান সংকুলান করে স্থায়ী ব্যবস্থা করা। বাজেট ও অনাস্থা প্রস্তাব ব্যতীত ৭০ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে সকল জনপ্রতিনিধিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আওতায় এনে কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তৃতায় ৭০ ধারা বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে এসেছেন। তিনি একাধিক সভায় বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নামে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানকে এমনভাবে সংশোধন করা হয়েছে যাতে দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রায় ৯৯ ভাগই সরকার প্রধানের হাতে। এতে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা গণতন্ত্রের পরিপন্থি। আমরা সংবিধানের ৭০ ধারার বিলুপ্তি চাই।
২১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। বিগত দু’টি সংসদে বিরোধীদলের আসনে থাকা দলটি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৬৫ আসনে লড়ছে। আওয়ামী লীগ তাদের ছেড়ে দিয়েছে ২৬টি আসন।
জাপার ইশতেহারে বলা হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত সরকারিভাবে ভাতা দেওয়া হবে। দেশের প্রতিটি গ্রাম ও শহরের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বেকার যুবক-যুবতীদের তালিকা করা হবে। তাদের যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নিরূপণ করা হবে।
বিদেশে শ্রম বাজার খুঁজে বের করা। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হবে শ্রম বাজার সন্ধান করা। প্রত্যেক উপজেলায় কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দপ্তর স্থাপন করা হবে। কৃষি শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চায় জাতীয় পার্টি।
বিগত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এতে দুই স্তর বিশিষ্ট সংসদ, প্রাদেশিক সরকার, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের ঘোষণা রয়েছে। দেশকে আটটি প্রদেশে বিভক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে রঙ্গপুর প্রদেশ, বরেন্দ্র প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ এবং চট্টলা প্রদেশ।
নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করতে চায় জাতীয় পার্টি। পুরোনো এই দফাটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামনে এনেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল- আসন ভিত্তিক প্রার্থী নয়, প্রত্যেক দল ৩০০ প্রার্থী ঘোষণা দেবে। ভোটের অনুপাতে তারা আসন পাবে। এতে করে কোনো একটি আসনে জেতার জন্য কেউ আর ভোট ডাকাতি করার চেষ্টা করবে না।
জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে উপজেলায় আবার কোর্ট ফিরিয়ে আনবে। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের হাতে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা প্রদান করা হবে। দারিদ্র নিরসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন শিল্পায়ন, এ জন্য জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে সারাদেশে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষিত করার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এবার সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন জিএম কাদের। তিনি ১৬ নম্বর দফায় বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে।
ইসলামী আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আরও সুসংগঠিত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে একটি ইসলামিক কমিশন গঠন করবে।
খেলাধুলার বিকাশে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক করা। খেলার মাঠ বিহীন প্রতিষ্ঠানকে বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে চলতে না দেওয়ার বিগত সময়ের ঘোষণা থেকে সরে এসেছে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগের তুলনায় এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট অনেক বেশি। জনগণ ভোট দিতে পারলে এন্টি ভোটেই জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করবে।