পদত্যাগ করেও নৌকা পাননি তারা

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-28 05:10:35

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দেশজুড়ে প্রায় ১৫ জনেরও বেশি উপজেলা চেয়ারম্যান ও একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

নৌকা পাবার আশায় পদ ছেড়ে দু'জন সফল হলেও হতাশ হতে হয়েছে অনেককেই। আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়নের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-৪ ও সুনামগঞ্জ-২ আসন ছাড়া আর কেউ পায়নি দলীয় মনোনয়ন।

এর আগে, রোববার (২৫ নভেম্বর) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করে। যেখানে জায়গা পাননি তাদের অনেকেই।

জানা যায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সরকারের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদ লাভজনক হওয়ায় এসব পদে থেকে সংসদ নির্বাচন করা যায় না। তাই পদ ছেড়েই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বেশ কিছু উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।

পদত্যাগ করে মনোনয়ন পেলেন তারা:

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশায় উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলাম শফি। তবে হতাশ হতে হয়নি তাকে। আসনটি থেকে তিনি হয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই ও শাল্লা) আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হতে শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেছিলেন। তবে তাকে হতাশ করেনি আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হয়ে হাল ধরবেন তিনি।

পদত্যাগ করে মনোনয়ন পাননি তারা-

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকা পেতে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী। তবে এ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।

কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার লক্ষ্যে পদত্যাগ করেছিলেন দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তবে হতাশ হতে হয়েছে তাকে। আসনটি থেকে নৌকার টিকিট পেয়েছেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।

নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার। তবে আসনটি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাক আহমেদ রুমী।    

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা পেতে পদত্যাগ করেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাইনুদ্দিন ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান। তবে তাদের দুজনকে হতাশ করে আসনটি থেকে নৌকার টিকিট পেয়েছেন মোহাম্মদ শফিকুর রহমান।

টাঙ্গাইল-২ (ভুঞাপুর-গোপালপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। এ আসনটি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ছোট মনির।

ঢাকা-২০ আসনে প্রার্থী হতে ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছিলেন মোহাদ্দেছ হোসেন। তবে আসনটির মনোনয়নে আসেনি কোন পরিবর্তন। বর্তমান সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ আবার ও হতে যাচ্ছেন নৌকার মাঝি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আশায় শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল।

তিনি চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড- উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবও পদ ছেড়েছিলেন সংসদ সদস্য হওয়ার আশায়। তবে তাদের দুজনের কারো ভাগ্যেই জুটেনি দলীয় মনোনয়ন। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন এস এম আল মামুন।

ঢাকা-১৯ (সাভার ও আশুলিয়া) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আসনটিতে আসেনি কোন পরিবর্তন তাই বর্তমান সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানই নৌকা নিয়ে লড়বেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এই চার দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ১২১ জন ফরম কিনেছেন। ফরম বিক্রি করে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে দলটির।

এর আগে, ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর