প্রতিমন্ত্রী জাকিরের বিরুদ্ধে একাট্টা আ.লীগ নেতারা, মনোনয়ন না দিতে আবেদন

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

আল-আমিন রাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-26 16:02:15

 

আসন্ন নির্বাচনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের নৌকার মনোনয়ন ঠেকাতে একাট্টা হয়েছেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগের নেতারা। তাকে বিতর্কিত ব্যক্তি উল্লেখ করে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা ১৬ পদধারী নেতা।

গত ২২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৬ নেতার স্বাক্ষরিত চিঠির একটি কপি বার্তা২৪.কমের হাতে এসেছে।

 আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম ৪ (চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর) আসনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তিকারী দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত জাকির হোসেনকে ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং সকলেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। এলাকায় রাজনীতি করতে গিয়ে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের কাছে যাই এবং তাদের খোজ খবর রাখি। কুড়িগ্রাম-৪ এর বর্তমান সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন দূর্নীতিবাজ ও মাদকাসক্ত ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দলীয় ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রচারে আমরা অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হই।

একই চিঠিতে সংসদ সদস্য জাকিরের বিতর্কিত কর্মকান্ডের পাঁচটি নমুনা তুলে ধরেন আবেদনকারীরা। এরমধ্যে প্রথম হলো-  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করে জাকির বলেছিলেন ‘বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহ যেন জাহান্নামের ভালো জায়গায় স্থান করে দেন’ যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়াসহ সারাদেশের মানুষ দেখেছেন। যা বঙ্গবন্ধু আদর্শের কর্মীদেরকে আহত করে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে মুজিবপ্রেমী বীরমুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন জাকির। সে যাত্রায় নেতা-কর্মীদের মামলার ভয় দেখিয়ে বেঁচে যান। রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারীতে ভূমিদস্যু ও বালু খেকো হিসাবে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র নদ ও সোনাভরী নদীর দুই প্রান্তে বালু উত্তোলনের ফলে এ বছর অনন্তত ২০০ পরিবার ভিটে মাটি হারিয়েছে। সে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।


সে নিজে একজন মাদকসেবী এবং তার পরিবার দিয়ে সে এলাকার মাদক ব্যবসা ও চোরাকারবার নিয়ন্ত্রন করে। তার পরিবারের একজন ছাড়া সবাই বিএনপি জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশের চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে চাকুরী না দিয়ে হাজার হাজার পরিবারকে পথে বসিয়েছে।

এছাড়াও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ৯৫% মানুষ তার বিপক্ষে। যেখানে আমরা নেতাকর্মীরাও সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছি এবং বিব্রত বোধ করছি।

নেত্রীর কাছে আবেদন, জাতীয়-২৮ কুড়িগ্রাম-৪’র নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ ভালো নেই। তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হতে চায়। তাই জাতীয়-২৮ কুড়িগ্রাম-৪ এ নৌকা মার্কায় জাকির হোসেন ব্যতিত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে সকল নেতা-কর্মীরা মিলে আপনাকে হয় উপহার দিবো।

যে ১৬ নেতা এই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন তারা সবাই আসন্ন নির্বাচনে সবাই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে  কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. মশিউর রহমান  রতন। মোবাইল ফোনে তিনি র্বাতা২৪.কমকে বলেন, আমরা কুড়িগ্রাম-৪ আসনসহ বর্তমান সংসদ সদস্যসহ ১৯ জন মনোনয়ন কিনেছি। এরমধ্যে আমরা মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৬ জন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। দল থেকে জাকির ছাড়া যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তাকেই আমরা বিজয়ী করে আনবো।

সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাকিরের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই উল্লেখ করে  রতন আরও বলেন,  জাকির ছাড়া ১৮ জন মনোনয়ন কিনেছে। তার সঙ্গে একজন ছাড়া কেউ নেই। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাকিরের কোনো যোগাযোগ নেই। কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তাকে পাওয়া যায় না। সে চলে তার পরিবার ও স্থানীয় জামায়াত বিএনপি ঘেষাদের নিয়ে চলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর