প্রবাসী, মৃত ব্যক্তি ও সরকারি চাকরিজীবীরা আ. লীগের কমিটিতে

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-10-11 00:23:38

দীর্ঘ চার বছরের অধিক সময় ধরে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ছিল না। এমনকি দলের মধ্যে বিরোধের কারণে আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা সম্ভব হয়নি। কমিটি না থাকায় সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ড দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। যার এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান এবং আরেক পক্ষে আছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার। দুপক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে আসছিল। 

সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের সামনে পৃথক পৃথক কর্মসূচি চলাচলে ফের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এরই মধ্যে রোববার (৮ অক্টোবর) মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি। 

সেই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন মৃত ব্যক্তি, সরকারি চাকরিজীবী। এমনকি ইউপি ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিদ্রোহী প্রার্থী এবং প্রবাসীসহ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি একাধিক সদস্য রয়েছেন কমিটিতে। আহ্বায়ক কমিটিতে এমন বিতর্কিতরা স্থান পাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ, হতাশা ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুলসহ আরও দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক। এতে ১৭নং ইমাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার মিয়াকে আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপির ছেলে রাশেক রহমানকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। ওই কমিটিতে আশিকুর রহমান এমপি ১নং সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, হারুনুর রশিদ কাজল নামে আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য কয়েক মাস আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এমনকি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সম্রাট মামুন পাশা একজন প্রবাসী এবং মোকছেদুল ইসলাম মন্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মশিয়ার রহমান রাখু সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে চাকরি করছেন।

এছাড়া দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৮নং চ্যাংমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল কবীর টুটুল, ১নং খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, ২নং রানিপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন পটু, ৭নং লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মন্ডল, ১১নং বড়বালা ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহেব সরকার, ১৪নং দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল ইসলাম প্রামাণিক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের উপজেলা নেতারাও এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি বলে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ৯নং ময়েনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকসেদুল আলম মুকুল একজন বিএনপি নেতা। তিনিও স্থান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে। এছাড়াও নন্দন কুমার দাস আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য পদ পেলেও তিনি নিজেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়েছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে নন্দন কুমার দাস হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বর্তমান মিঠাপুকুর উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন কমিটিতে নেই।

এছাড়াও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার মিতু ও এনামুল হক কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতাকারীরা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক জুলফিকার আলী সাদমানী।

তিনি বলেন, আহ্বায়ক আফসার মিয়া নিজে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। যারা একসময় নৌকার বিপক্ষে কিংবা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন তাদের দিয়েই এই আহ্বায়ক কমিটি করার কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ত্যাগী পরিশ্রমী নেতারা বাদ পড়েছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া বলেন, যে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে মৃত ব্যক্তিও সদস্য হয়েছেন। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীরা পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে জানতে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল বলেন, কমিটি ঘোষণার সাতদিন পরেই একজন মারা গেছেন। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীসহ বিতর্কিত কোনো ব্যক্তির যদি নাম থাকে তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করা হবে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর