জাপার অব্যাহতি দেওয়া নেতাদের অন্তর্ভুক্তির আদেশ রওশনের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 06:30:05

জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও কমিটিতে বাদ দেয়া সব নেতাকর্মীদের পার্টিতে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দিয়েছেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের লেটারহেড প্যাডে পাঠানো ওই চিঠি পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব, গোলাম মসীহ চিঠি প্রেরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বার্তা২৪.কমকে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চিঠি পার্টির চেয়ারম্যানের মেইলে প্রেরণ করা হয়েছে।

রওশন এরশাদ চিঠিতে লিখেছেন, অচলাবস্থার অবসান ও পার্টিকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গাফফার বিশ্বাস, এছাড়া নবম সন্মেলনের পর, পদ পদবিতে না রাখা সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাড. মাহবুবুল আলম বাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরুসহ দেশজুড়ে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও নিষ্ক্রিয় করে রাখা সব নেতাকর্মীদের এই আদেশ জারির পর হইতে যার যার আগের পদ পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

জাপা চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতার সংরক্ষক হিসেবে পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা-১; প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে গঠনতন্ত্রের বিশেষ ক্ষমতা এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ধারা ২০ এর উপধারা ২ এর সব বিধান স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছেন।

রওশন এরশাদ বলেন, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা ১ এর সব বিধান অপব্যহৃত হয়। যা গনতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের বিধি বিধান মেনেই তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেখানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে পার্টির সব তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এসব ধারার বিপক্ষে। এটা বাতিল চায় লাখ লাখ এরশাদ প্রেমি কর্মী সমর্থক।

প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলেন, আপনার মন্তব্য অনুযায়ী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ ও সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা যেমন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তেমনই নবম সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় গঠনতন্ত্রে ২০ ধারার উপধারা ১ এর সব উপধারা ও অনুচ্ছেদ। এর মাধ্যমে যখন তখন তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত কোনো ধরনের শোকজ বা বিনা নোটিশে বহিস্কার ও অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। যা একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ গৃহীত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১(১), উপধারা-২ ও উপধারা-৩ বর্ণিত বিধানাবলীর সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ন্যূনতম কোনো মিল নেই।

জাতীয় পার্টির অভিভাবক হিসেবে সারা দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীর দাবি মেনে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব ক্ষমতা স্থগিত করা হলো উল্লেখ করে তা কার্যকরের নির্দেশনা দেন।

এরইমধ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, বিগত দিনে দলের বহু সিনিয়র, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এতে করে পার্টিকে দিনে দিনে দূর্বল করা হয়েছে। করা হয়েছে খন্ডিত। পার্টির মধ্যে অগণতান্ত্রিক আবহ থাকায় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং পদ হারানোর ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে আবারো পার্টি খন্ডিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাতীয় পার্টি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছেন। এতে পার্টির নেতাকর্মীরাও অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন। গত ৩১ আগস্ট হঠাৎ করেই কাউন্সিল আহ্বান করেন রওশন এরশাদ। ২৬ নভেম্বর তারিখ ঘোষণার সময় একটি প্রস্তুতি কমিটিও ঘোষণা করেন। প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয় বেগম রওশন এরশাদকে। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন তার রাজনৈতিক সচিব ও এরশাদ মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি গোলাম মসীহকে। রওশন এরশাদের ওই চিঠির এখতিয়ার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করেন জিএম কাদের। প্রতিক্রিয়ায় রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে অপসারণের জন্য চিঠি দেন স্পিকারকে। এরই মধ্যে মসিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে পার্টির সকল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর