‘দেশের মানুষ যেন নরকের আগুনে জ্বলছে’

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 09:38:04

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশের মানুষ যেন নরকের আগুনে জ্বলছে। যারা বোকার স্বর্গে বাস করেন তারা হয়তো মনে করেন আমরা খুবই ভালো আছি।

সোমবার (২১মার্চ) জাপার বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, বৈষম্য আর লুটপাটের কারণে দেশের মানুষ নরকের আগুনে পুড়ছে। মাঝে মাঝে ক্রিকেট ও ফুটবলে বিজয়ের দু-একটা সুখবরে যেনো ঠান্ডা বাতাসে বইয়ে যায়। আসলে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষই ভালো নেই। শতকরা ১ ভাগ মানুষ যারা দেশের বাইরে আসা-যাওয়া করেন, তারা বুঝতে পেরে বিদেশকে স্বর্গ ভেবে দেশ থেকে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছেন।

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোন দলের বি-টিম নয়। জাতীয় পার্টি কোন দলের দালালি করে না। জাতীয় পার্টি কারো জোটে নেই। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেই জোট গঠন হবে। কেউ জাতীয় পার্টির ভেতরে থেকে অন্য দলের দালালি করতে চাইলে তার স্থান জাতীয় পার্টিতে হবে না। ১৯৯১ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে সংবিধান কাটাকাটি করে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ১৯৯১ সালের আগে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে একটা ভারসাম্য ছিলো। এখন সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার নামে এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাই জবাবদিহিতা নেই কোথাও। দেশে আইনের শাসনে ঘাটতি আছে ও সুশাসন নেই। যারা সরকারি দল করে তাদের জন্য এক ধরনের আইন আর যারা বিরোধী দল করে তাদের জন্য ভিন্ন আইন। আর সাধারণ মানুষের জন্য আইন যেন আরও আলাদা। আওয়ামী লীগ ১ বার দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে আর বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে ৫ বার দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে যেন কারো কিছুই করার নেই। লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে আবার সড়কে প্রতিদিন কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তার কোন হিসাব নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, সামাজিক নিরাপত্তা নেই। নাবালক শিশু কৌতুক করলেও তার সাজা হয় আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন কর্মকর্তা অবস্থান নিলে তার চাকরি চলে যায়। দেশে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন চলছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশে সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না। কালো টাকা আর পেশি শক্তির কারণে আদর্শবান মানুষ নির্বাচন করতে চাচ্ছে না। দেশে অসহিষ্ণু রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি। বিএনপি এখন নেতৃত্ব শূন্যতায় অধঃপতনের পথে। আর আওয়ামী লীগ প্রশাসন দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। প্রশাসন দিয়ে দেশ চালানোর কারণে দেশের মানুষ সেবার পরিবর্তে শাসনের মুখে। স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিলো বৈষম্যহীনতা। তখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের সাথে বৈষম্য করতো। আমাদের দেশের টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করতো। এখন আমাদের দেশের মানুষের সাথে বৈষম্য করে ক্ষমতাসীনরা। এখন আমাদের দেশের হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে সুশাসন দিতে পারেনি আর পারবেও না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গুণগত কোন পার্থক্য নেই। দেশের মানুষ বাঁচার জন্য বিকল্প শক্তি খুজছে, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির প্রতি আস্থা রাখতে চায়।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, বিএনপি আবারও হাওয়া ভবন সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছে। অসুস্থ পল্লীবন্ধুকে জেলখানা থেকে পিজি হাসপাতালে নিতে বারবার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তখন বিএনপি সরকার পল্লী বন্ধুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। বিএনপি চেয়েছিলো
এরশাদ যেন জেলখানাতেই মারা যান। কিন্তু আল্লাহর বিচার এখন দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ মনে করছে নৌকা পেলে এমপি, মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান হওয়া যায়। তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে স্বপ্ন দেখছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশে চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। যে সরকার টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে পারে না, তাদের মুখে উন্নয়নের কথা শোভা পায় না। মানুষ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে বাসে চড়তে পারে না। দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে চায় না। দেশের মানুষকে মুক্তি দিতেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।

এসময় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, গাজীপুর নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আল আমিন সরকার, মনিরুজ্জামান খান, রাহেলা পারভীন শিশির, এসএম কিবরিয়া, চিশতী আলমগীর, মাহাবুর রহমান মৃধা, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর