বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে আসতে 'অনিচ্ছুক' কারাকর্তৃপক্ষের এমন প্রতিবেদনকে প্রসিকিউশন ভুল ব্যাখা ও অপপ্রচার বলে আদালতকে জানান তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের প্রতি অনাস্থা কিংবা অবজ্ঞা প্রকাশ করেন নি। শুধুমাত্র অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালত ৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামানের আদালতে সানাউল্লাহ মিয়া এসব কথা বলেন।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে আসতে অসম্মতি জানিয়েছেন বলে কারাকর্তৃপক্ষ আদালতে একটি লিখিত পত্র দাখিল করেন।
এর প্রেক্ষিতে বিচারক খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়ে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে অনিচ্ছুক। কারাকর্তৃপক্ষের লিখিত পত্র আমার সামনে রয়েছে।
এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে অনিচ্ছুক শব্দের ব্যাখ্যা চান আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত, খালেদা জিয়া অসুস্থ তা আপনি জানেন। অনিচ্ছুক মানে অবজ্ঞা না অসমর্থ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেন নি।
'মাননীয় আদালত, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাচ্ছেন না, নাকি তিনি অসুস্থ? খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আদালতে উপস্থাপন করবো। মাননীয় আদালত, আপনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিন।'
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির কোথাও নেই অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য করা যাবে। খালেদা জিয়া যেহেতু আপনার কাস্টডিতে আছেন। আপনি অনুমতি দিলে আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলামের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু করতে আদালতে আবেদন জানান।
এসময় সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া তার শারীরিক অবস্থা আদালতে হাজির হয়ে জানিয়েছেন। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এরপর কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানানো হয়নি।
'আমরা কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাই। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদেরও অবগত হওয়া দরকার। কেন তিনি আদালতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।'
এসময় অপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করেন এবং নতুন ধার্য দিন পর্যন্ত আদালত মুলতবি করুন।
আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, হোয়াট ইজ দিস? ইনিয়ে বিনিয়ে বক্তব্য দিয়ে লাভ কি? আইন দেখান?
এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একটু থেমে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলবে। সিআরপিসিতে স্পষ্ট আছে।
তিনি বলেন, 'উনারা বলেছেন, এটা প্রকাশ্য আদালত না। এখন বলছেন, রুটিন ওয়ার্ক করে দিন। হোয়াট ইজ দিস? এটা কি ইউনিয়ন পরিষদের বৈঠক? যে চেয়ারম্যান না থাকলে কোরাম হবে না?'
যুক্তিতর্ক না করে জামিন! এটা তো হতে পারে না। আদালতের নিয়ম মেনে জামিন নেবেন, আদালতের নিয়ম মেনে যুক্তিতর্ক করবেন না - এটা তো হতে পারে না বলেন দুদকের এই আইনজীবী।
মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে আরও বলেন, খালেদা জিয়া সন্মানিত ব্যক্তি। তিনি যদি আদালতে না আসেন তাহলে তার জামিন মওকুফ করে দিন। অন্য আসামীদের পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক না করেন তাহলে রায়ের তারিখের পরবর্তী দিন ধার্য করে দিন। আমরা রায়ের অপেক্ষায় থাকবো।
এর বিরোধিতা করে আদালতকে খালেদা আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি জামিন মওকুফের আদেশ দেননি। মওকুফের কোন সুযোগ নেই। তিনি অসুস্থ। তা আপনি জানেন। আপনি তা দেখেছেন। উনার সুযোগ সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত সময় পর্যন্ত জামিন বৃদ্ধির আবেদন করছি।
মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে বিচারপতি আখতারুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম চলবে কিনা সে বিষয়ে আদেশের দিন ২০ সেপ্টেম্বর ধার্য করেছেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে পরবর্তী সময় জানানো হবে বলে উপস্থিত গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।