চাকরিতে বয়সসীমা না বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-21 22:47:52

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোর ব্যাপারের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভাল। তাই ২২-২৩ বছরের মধ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করতে পারছেন তরুণরা। কাজেই তারা চাকরিতে প্রবেশে সাত বছর সময় পাচ্ছে। চাকরিতে প্রবেশে সাত বছরই যথেষ্ট।’

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে সংসদ অধিবেশনে বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের বিধিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবুল।

পরে সেই প্রস্তাবের জবাবে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। যে নীতিগত সিদ্ধান্তটি এখন চলমান আছে, তা হচ্ছে সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা উত্তর বয়সসীমা ছিল মাত্র ২৫ বছর, পরবর্তীতে ২৭ বছর করা হয়। সর্বশেষ ৩০ বছর করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিসিএস পরীক্ষায় ৩০ বছর ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩২ বছর করা হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তখন বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জট লেগে থাকত। সেই বিবেচনায় বয়স বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সেশন জট নেই, যে কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা যথাসময়ে অর্থাৎ ২৩ বছরেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করছে।’

ব্যাখা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাব অনুযায়ী যদি ২৩ বছরে একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করেন, আর ৩৫ বছরে একজন চাকরিতে প্রবেশ করেন, তাহলে দুই জনের মধ্যে বয়সের পার্থক্য দেখা দেবে। তাতে বয়সের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেবে। বয়সের অসামঞ্জস্যতার কারণে একই পদে চাকরি করার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হতে পারে।’

‘সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর রয়েছে। পেনশনের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা রয়েছে। পেনশন পেতে হলে অন্তত ২৫ বছর চাকরি করতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি ৩৫ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে চাকরিতে প্রবেশ করতে ৩৫ বা ৩৭ বছর লেগে যায় তাহলে ৫৯ বছর থেকে ৩৭ বছর বাদ দিলে মাত্র ২২ বছর হয়। সেক্ষেত্রে পেনশন পেতে ঝামেলা হবে।’

এর আগে রেজাউল করিম বাবুল সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন সরকারি ও বিরোধীদলের মোট ১০ জন সদস্য। প্রস্তাবটি ছিল ‘সরকারি চাকুরিতে নিয়োগে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করা হউক’।

বাবুল প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, ‘বিশ্বের ১৯৯টি দেশের ১৫৫টি দেশে চাকিরতে প্রবেশের বয়সীমা ৩৫-৫৯ পর্যন্ত রয়েছে। আমেরিকা কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইরাক, ইরান এ রকম ১৫৫টি উন্নয়নশীল দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত করা আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখের অধিক। লেখাপড়া শিখে যখন একটা সন্তান বেকার থাকে, তখন তারা পরিবারের কাছে যে কত বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, সেটা পিতা-মাতাই জানেন। আমরা এই বোঝা আর বাড়তে দিতে চাই না। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সীমা ৩০ বছরের পরিবর্তে ৩৫ বছর করা হোক।’

প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধেও প্রস্তাবকারী সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহার না করায় ডেপুটি স্পিকার প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দিলে সেটি নাকচ হয়ে যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর