সৌদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি ব্যাখ্যা চাইলেন দুই এমপি

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 03:10:39

সৌদি আরবের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে (১৪ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এটা সংবিধানের ২৫ বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুইজন সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তার বক্তব্যের সমর্থন করে কথা বলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।

স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেনন বলেন, আমি সংবিধানে ২৫ বিধির প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিবিসি’র সংবাদের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, গত পরশু  বিবিসি সংবাদ দিয়েছে যে সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশ ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা। আমরা জানতে পেরেছি চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করে নাই। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের ১৮০০ সেনা নিয়োগ দেওয়ার কথা। সৌদি আরবে ইসলামী সেনাবাহিনী কাউন্টার টেরোরিজম কমিশন (আইএমসিটিসি) বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ ৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে ।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাস বিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লিখেছিল তখনই আমরা বলেছিলাম আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তার চুলছেড়া বিশ্লেষণ জরুরি। খটকা ছিল তখনই এবং সেই সময় সৌদি আরব যেটাকে ৩৪ জাতি সামরিক জোন বলেছিল। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনিয়ে বিনিয়ে তখন বলেছিল এটা একটি সন্ত্রাস বিরোধী সন্মিলিত উদ্যোগ। সেই সময় জনগণের সেই উদ্যোগ এবং আশঙ্কাকে নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে সৌদি আরবে যে দুটি মসজিদ রয়েছে মক্কা এবং মদিনায় হেরেম শরীফ, এই মসজিদ দুটি যদি আক্রমণের মুখে পড়ে তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে এর বাইরে কখনো কোনো সেনাবাহিনী পাঠাবে না। আমরা আশস্ত হয়েছিলাম কিন্তু এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। কিন্তু আমরা জেনেছি এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না? সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এই দুই দিক দিয়ে  বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রথমটি হচ্ছে সেনাবহিনী মোতায়েন। এটা জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের সাথে সঙ্গিতপূর্ণ কি না? দ্বিতীয়ত আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশ উপস্থিতিতে আমাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি কি হবে?

তিনি বলেন, আমরা জানি ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্ব যে সমঝোতা এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে সেখানে প্রতিমুহূর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য। আমরা জানি আরব দেশের বসন্তের তার বিকৃত প্রয়োগ ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কি ধরণের পরিণতি সৃষ্টি করেছিল। এবং সৌদি আরব সেখানে কি সুবিধা নিতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন ইয়েমেনের ঘটনা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে সীমান্তে মাইন অপসারণ করবেন, আমাদের সেনাবাহিনী যারা একদিন ইরাকি আগ্রসনের বিরুদ্ধে কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম অর্জন করেছিল, তারা কেন মাইন অপসারণের নামে নিজেদের জীবন দেবে। যেটা সংবিধান অনুমোদন করে না।

মেনন বলেন, শুধু তাই নয় যখন ইয়েমেন সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনী থাকবে খবু স্বাভাবিকভাবেই একটি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক এখানে সৃষ্টি হবে। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলেছি কোন বিরোধপূর্ণ ঘটনায় আমাদের সেনাবাহিনী বা বাংলাদেশ সেখানে অংশ নেবে না। আমরা এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বিবৃতি পাইনি। তাই আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দাবি করছি। পাশাপাশি স্পিকার (আপনিও) বিষয়টি সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না আপনার কাছ থেকে রুলিং আশা করছি।

ফখরুল ইমাম বলেন, সংসদ রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক অঙ্গ। সংবিধানের ১৪৫ (ক) বলা আছে কোনো বৈদেশিক চুক্তি হলে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন এবং রাষ্ট্রপতি সেটা সংসদে দেবেন । এটা আলোচনা করলে কি অসুবিধা ছিল? আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গতকালও এখানে ছিলেন, উনি উনি জানতেন এই চুক্তিটা হবে। উনি আমাদের অধিকার ক্ষু্ণ্ন করে কি না এটা আমার প্রশ্ন।

তিনি বলেন, আমাদের না জানিয়ে, সংসদকে পাশ কাটিয়ে আজকে যদি সেশন না থাকত তাহলে বুঝতাম যে পার্লামেন্টকে অবজ্ঞা করেন নাই। আমার মনে হচ্ছে সংসদকে অবজ্ঞা করে, পাশ কাটিয়ে সংসদকে মূল্যহীন ভেবে এই জিনিসিগুলো করা হয়েছে। এটা সরকারের জন্য কতটুক যুক্তিযুক্ত হয়েছে। আমরা টিকফা চুক্তিও দেখেছি, কোন চুক্তি আপনার (স্পিকারের) দফতরে জমা পড়েছে কি না আমি জানি না। ২৫ বছরের চুক্তিও আছে কি না আমি জানি না। এটা আরও পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। এই সংসদের মান মর্যাদা আমাদের গণতন্ত্রের মূল্যায়নের জন্য। আমরা চাই গণতন্ত্র আস্তে আস্তে এগিয়ে যাক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর