করোনা নিয়ে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম যথেষ্ট নয়

ঢাকা, জাতীয়

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪. কম | 2023-08-28 11:29:21

বিশ্বে করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর মহামারি আকার ধারণ করায় দেশে দেশে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। যেহেতু করোনার ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়নি, সেহেতু জনসচেতনায় রোগের প্রকোপ ও বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছে পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একাধিক সংস্থা ও বিভাগ। ওয়েবসাইট,  মিডিয়া, সোস্যাল নেটওয়ার্ক উপচে পড়ছে নানা তথ্য ও করণীয় সম্পর্কিত নির্দেশনায়। বাংলাদেশ এহেন সঙ্কুল পরিস্থিতিতে অনেক পিছিয়ে আছে। সঠিক তথ্যের বদলে ছড়াচ্ছে ভীতি ও গুজব। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা নিয়ে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম যথেষ্ট কিনা?

বাংলাদেশে এখনও 'এপিডেমিক' আর 'পেনডেমিক' বলতে কি বোঝায়, তা-ই অনেক শিক্ষিত মানুষ পর্যন্ত জানেন না। করোনার স্টেজ বা স্তরগুলোও জানা নেই অনেকের। বাংলাদেশ এখন স্টেজ ১, ২, ৩, ৪-এর মধ্যে কোন স্টেজে আছে, সরকারিভাবে সেই পূর্বাভাসও দেওয়া হয়নি। ফলে কোন স্টেজে কেমন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারেও মানুষ অন্ধকারে।

একইভাবে 'আইসোলেশন' এবং 'কোয়ারেন্টাইন' বলতে কি বোঝায়, তা-ও সবার কাছে স্পষ্ট নয়। এতে বিদেশ-ফেরত এবং ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন দিব্যি ঘুরে বেড়াতে পারছেন। আত্মীয়রা তাদের বিদেশ প্রত্যাগতদের নিয়ে দাওয়াত খাচ্ছে। নিজেদের অগোচরে রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছেন জনস্বাস্থ্যের তথ্য ও জ্ঞানহীন লোকজন।

সঙ্গরোধ ও স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্নতায় কিরূপ আচরণ ও আন্তঃসংযোগ করতে হবে, তার ধারণাও নেই সবার। ঘরে বসে মাখামাখি, আড্ডা, হৈচৈ করে টিভি দেখার মাধ্যমে করোনাভাইরাস থেকে বিচ্ছিন্নতা হয় না। এমন সঙ্গরোধ কোনও উপকারেই যে আসবে না, তা বহুজন জানেন না।

ব্যক্তিগত সতর্কতা, পরিচ্ছন্নতার জন্য শুধু হাত ধোয়া নয়, আসবাবপত্র, ব্যবহার্য সামগ্রী জীবাণুমুক্ত রাখার বিষয়েও নেই সতর্কতা। কাজের বুয়া, দুধওয়ালা, মাছওয়ালা, সবজিওয়ালা সম্পর্কেও বাড়তি সতর্কতা নেই। হাট-বাজার থেকে শত হাত ঘুরে আসা পণ্য ঢুকছে বাসায়। পলিথিন, প্যাকেট, উচ্ছিষ্ট সম্পর্কেও পরিবেশসম্মত বিধিবিধান মান্য করা হচ্ছেনা।

দেশের বিরাট বিরাট বস্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা জ্ঞান অত্যন্ত কম। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে তাদেরকে শিক্ষিত ও সতর্ক করার বিষয়ে এখনও কিছুই জানা যায়নি। একইভাবে, হোটেল, রেস্তোরাঁ, সিএনজি, বাস, রিকশা ইত্যাদির মাধ্যমে অতিদ্রুত সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্কুল, কলেজ, জনসমাবেশ বন্ধ করার পাশাপাশি করোনার বিস্তার রোধে জনস্বাস্থ্যগত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে জনশিক্ষা ও সচেতনামূলক প্রচার যেমন নেই, তেমনি নেই কঠোর প্রশাসনিক-আইনগত উদ্যোগও। যেজন্য, বিভিন্ন জেলায় বিদেশ প্রত্যাগত হাজার হাজার মানুষকে এখনও শনাক্ত ও বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। তারা করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে সমাজে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  

সার্বিক পরিস্থিতিতে জনগণের সর্বস্তরে জনস্বাস্থ্যগত শিক্ষা প্রচার ও তা যথাযথভাবে  মান্য করার কার্যক্রম যে যথেষ্ট নয়, তা বলাই বাহুল্য। এই শৈথিল ঘনবসতিপূর্ণ বিশাল জনসংখ্যার বাংলাদেশের জন্য যে কতটুকু মারাত্মক ঝুঁকির কারণ, তা অবিলম্বে নীতি প্রণেতা ও বাস্তবায়নকারীদের অনুভব করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর