করোনাভাইরাস নিয়ে ১১টি প্রশ্ন ও উত্তর

ঢাকা, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 19:03:07

বিশ্বের প্রায় ১১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ভাইরাসটি নিয়ে মানুষের মনে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে। বহুল আলোচিত ১১টি প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়া হলো।

এক. করোনাভাইরাসের সুপ্তাবস্থা কত দিন?
বিজ্ঞানীদের মতে, গড়ে ৫ দিনের মধ্যেই করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সুপ্তাবস্থা ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কিন্তু কিছু গবেষক বলেছেন—এটা ২৪ দিন পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।

দুই. সুস্থ হওয়ার পর কি শরীরে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হবে?
এটা আসলে এখনই বলা সম্ভব না। মাত্র ডিসেম্বরের শেষে এই ভাইরাস সম্পর্কে জানা গেছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা, যা পরবর্তীতে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। সার্স এবং এ জাতীয় অন্যান্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার কথা তেমন শোনা যায়নি।

সংগৃহীত ছবি

তিন. ফ্লু এবং করোনাভাইরাসের মধ্যে পার্থক্য কী?
ফ্লু এবং করোনাভাইরাসের একই রকম বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। তবে পরীক্ষা ছাড়া নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। করোনাভাইরাসের মূল লক্ষণ হলো— জ্বর এবং কাশি। ফ্লু-এর সাথে আরো কিছু লক্ষণ যেমন, গলা ব্যথা থাকে। করোনাভাইরাসে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

চার. সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন বা স্ববিচ্ছিন্নতা কী?
সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন বা স্ববিচ্ছিন্নতা মানে ১৪ দিনের জন্য কর্মস্থল, স্কুল বা অন্য কোন পাবলিক প্লেসে না গিয়ে এবং পাবলিক পরিবহন ব্যবহার না করে বাড়িতে থাকা। বাড়িতেও অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। খাবার, ওষুধ বা অন্য কিছুর দরকার হলে আপনার দরজা পর্যন্ত দিয়ে যেতে পারবে তবে আপনাকে দেখতে ভেতরে কেউ যেতে পারবে না। নিজের পোষা প্রাণীর থেকেও দূরে থাকা উচিত। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে এদের ধরার আগে ও পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

পাঁচ. হাঁপানি রোগীদের জন্য করোনাভাইরাস কতটা বিপজ্জনক?
শ্বসনতন্ত্রের ইনফেকশন যেমন, করোনাভাইরাস হাঁপানির লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যেসব হাঁপানি রোগী করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত তাদের কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যেমন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রতিদিন ইনহেলার নিতে বলা হচ্ছে, যাতে করোনাভাইরাসের মতো কোন ভাইরাস হাঁপানি বাড়াতে না পারে।

সংগৃহীত ছবি

ছয়. ফোনও কি জীবাণুমুক্ত করতে হবে?
করোনাভাইরাস মূলত মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটা যেকোন কিছুর ওপর একাধিক দিন জীবিত থাকতে পারে। তাই বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে বার বার টেলিফোন ও মোবাইল ফোন ভালোভাবে পরিষ্কার করা খুব জরুরি।

তবে ফোন কোম্পানিগুলো অ্যালকোহল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক ওয়াইপ দিয়ে ফোন পরিষ্কার করতে নিষেধ করছে। কারণ এতে স্ক্রিনের প্রোটেকটিভ স্ক্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্ক্রিনে জীবাণু খুব সহজেই আটকে থাকতে পারে। পানি প্রতিরোধী ফোনগুলো সাধারণ সাবান-পানি ও টিস্যু পেপার দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে।

সাত. দরজার হাতলের মাধ্যমে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে এবং হাতলে কতদিন পর্যন্ত ভাইরাস জীবিত থাকতে পারে?
যদি কোন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কাশির সময় মুখে হাত দেয় এবং সেই হাত দিয়ে কোন কিছু ধরে তাহলে সেটির মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে। দরজার হাতল এ ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। তাই করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কিছুক্ষণ পর পর সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়া।

আট. পাবলিক সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা কি নিরাপদ?
অধিকাংশ সুইমিংপুলের পানিতে থাকে ক্লোরিন যা ভাইরাস মেরে ফেলে। যদি কোন সুইমিংপুল সঠিকভাবে ক্লোরিনেটেড করা থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা নিরাপদ হতে পারে। তবে চেঞ্জিং রুমে বা ভবনের যেকোন জায়গা যা আক্রান্ত ব্যক্তি ধরেছে যেমন, দরজার হাতলের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে।

সংগৃহীত ছবি

নয়. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার ঠেকাতে কি মাস্ক পরে থাকতে হবে?
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরে থাকার ব্যাপারে তেমন বলা হচ্ছে না। কারণ এর কার্যকারিতার ব্যাপারে ভালো কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং ঠিকমতো হাত ধুতে এবং অযথা মুখে হাত না দিতে বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে।

দশ. শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কতটা?
চীনের তথ্য থেকে দেখা গেছে শিশুরা তেমন করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। এর কারণ আসলে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। হয়তো তারা এই সংক্রমণ এড়িয়ে যাচ্ছে বা মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হচ্ছে না। অর্থাৎ শিশুরা রোগটিতে খুব মৃদুভাবে আক্রান্ত হচ্ছে যার কারণে তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না।

তবে যেসব শিশুর ফুসফুসের কোন সমস্যা যেমন হাঁপানি রয়েছে তাদের খুব সাবধানে থাকতে বলা হচ্ছে।

এগারো. আক্রান্ত ব্যক্তির তৈরি খাবার খেলে কি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
যদি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার তৈরি না করেন তাহলে খুব সহজেই করোনা ছড়াতে পারে। তাই এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে খাবার ধরার এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর