‘পায়রা নদীতে সেতু’ শীর্ষেন্দুর কথা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 13:45:40

চার বছর আগের কথা। ২০১৬ সালে ১৫ আগস্ট পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস সেতু চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছিল। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন খরস্রোতা পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণ করা হবে। এখন শীর্ষেন্দুর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

মঙ্গলবার (১০ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭ তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূরণ হবে শীর্ষেন্দুর ইচ্ছা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ করা হলে ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহানিয়া-কানাইয়া’সড়কে যাতায়াতকারীরা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবেন।

এ বিষয়ে সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আপনাদের সবার মনে আছে একটি সেতু চেয়ে শিশু শীর্ষেন্দু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিল। শিশুটির চিঠিতে অনেক মানবিক যুক্তি ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক-দয়ালু। শিশুকে দেওয়া কথা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি শীর্ষেন্দুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭ তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে ১ হাজার ৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদর এবং ঢাকার সরাসরি, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে। মার্চ ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদেই শীর্ষেন্দুর ইচ্ছা পূরণ করা হবে।

প্রকল্পের বাস্তবায়নে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬শ মিটার, সেতু (ভায়াডাক্টসহ) ১ হাজার ৬৯০ মিটার, গাইড বাঁধ নির্মাণ হবে ১ হাজার মিটার। প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে ৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নিরাপত্তা সেবা নিয়োগসহ বিস্তারিত ডিজাইন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।

নির্মাণ তদারকি পরামর্শক সেবা ও টোলপ্লাজা নির্মাণসহ কম্পিউটারাইজড টোল আদায় পদ্ধতি চালুকরণ ছয়টি ওজন স্টেশন স্থাপন, টোল মনিটরিং ভবন, পুলিশ স্টেশন এবং প্রকল্পের জনবলের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ হবে চারটি। নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ ১ হাজার মিটার, অ্যাপ্রোচ সড়ক ৬শ মিটার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতাদি, যানবাহন সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ কাজ করা হবে।

৪ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীকে শীর্ষেন্দু লিখেছিল, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদী পার হতে হয়। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ হয়। মানুষ ভয় পায়। কখনও নৌকা ডুবে যায়। কখনও ট্রলার ডুবে যায়। নৌকাডুবিতে আমার থেকেও ছোট-ভাইবোন তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে। তাই আমি চাই কেউ যেন আর মা-বাবাকে না হারায়। আমি আমার মা-বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ, আপনি মির্জাগঞ্জ নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করুন।’

ছোট্টশিশুটির এই করুণ আকুতি সে সময় প্রধানমন্ত্রীর অন্তরকে নাড়া দেয়। তাই সেই শিশুটিকে চিঠির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট পায়রা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর