রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। ৭২টি তাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মামলার চার্জশিট এক বছরেও আদালতে জমা দিতে পারেনি পুলিশ। মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিও এখন জামিনে মুক্ত।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় যে সুগন্ধির গুদাম ও বোতলজাত করার কারখানা থেকে, তার মালিকরা এখনো আড়ালেই রয়ে গেছেন। নাম জানা গেলেও তাদের ঠিকানা কিংবা অবস্থান জানে না পুলিশ।
এদিকে যে কেমিক্যাল থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সেই কেমিক্যালের গুদাম এখনো রয়ে গেছে চুড়িহাট্টার আশপাশের এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে সুগন্ধি বোতলজাত করার কারখানা ও গুদামে আগুনের সূত্রপাতের তথ্য মিললেও এজাহারে উল্লেখ ছিল সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা। তাই দুর্বল এজাহারে আলোচিত সেই ভবনটির নামও নেই। এসব ভুলের সুযোগ নিয়ে ভবন মালিকের দুই ছেলে দীর্ঘদিন জামিনে রয়েছেন।
গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টা মোড়ের কাছে চারতলা ভবন ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সময় যত পার হতে থাকে আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে। ওই ভবন এবং আশপাশের দোকানে থাকা রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-সুগন্ধির গুদাম আগুনের মাত্রা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ৬৭ জনের পোড়া ও খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে গণনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১-এ।
অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন—এই পাঁচটি সংস্থার পাঁচটি কমিটি কাজ করেছিল। সব প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়, আগুনের সূত্রপাত ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার রাসায়নিক গুদাম থেকে হয়েছিল।
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা মো. আসিফ আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এক বছরেও মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী। বার্তা২৪.কমকে আসিফ আহম্মেদ বলেন, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি, এখনও পাইনি। এতদিনেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই, এটা খুব দুঃখজনক।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ বলছে, মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। অজ্ঞাত অন্য আসামিদের তিনজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। আবার ঢামেক থেকে মরদেহের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনও আসেনি। ওই প্রতিবেদন ছাড়া চার্জশিট জমা দেওয়া যাচ্ছে না।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (চকবাজার থানা থেকে যিনি বদলি হয়ে গেছেন) মোরাদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামলার এজাহারে কোন ভুল ছিল না। সিস্টেমেটিক কিছু ভুলের জন্য আসামিরা জামিন পান। আমরা এজাহারে প্রাইভেট কারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং ৬৫ ও ৬৬ নম্বর ভবনের কথা উল্লেখ করেছি। অথচ ওই দুটি নম্বরের কোনো ভবনের মালিক নন আসামিরা। দুই ভাই ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনের স্বত্বাধিকারী। এসব ভুল থাকায় আসামি প্রথমে জামিন পান।
গত ১৬ এপ্রিল এজাহারভুক্ত আসামি দুই ভাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মার্চে জামিন পান তারা। সর্বশেষ ১৬ ফেব্রুয়ারি জামিনের মেয়াদ আরো এক বছর বেশি পান মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ।
মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে জামিনে রয়েছেন। যারা ভাড়া নিয়ে পারফিউম ও কেমিক্যাল ব্যবসা করছিলেন, তাদের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য মালিকপক্ষ দিতে পারেনি। ইমতিয়াজ আহমেদ ও তার দুই ব্যবসায়িক পার্টনার; তারা যে ঠিকানা ও তথ্য ব্যবহার করে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলেন তা যাচাই করতে সিটি করপোরেশনে যাই। সেখানে তাদের নাম-পরিচয়ের সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মেলানোর পরও কিছু পাওয়া যায়নি। সব কিছু মিলে সময় লাগছে।