চাকরি আছে, সময় মতো কাজেও আসতে হয়। দেরিতে অফিসে আসলে হাজিরা খাতায় লাল কালিতে অনুপস্থিত লিখে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাস শেষে বেতনের কোনো খোঁজ নেই। প্রতিমাসেই আশ্বাস মেলে পরের মাসে বেতন হবে। কিন্তু আশ্বাস কখনো কাজে আসে না। এভাবেই টানা ৯ মাস খুলনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ২১১ জন বেতন পাননি।
জানা যায়, ঠিকাদারের মাধ্যমে খুলনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ২১১ জনের বেতন মেলেনি ৯ মাস ধরে। টানা নয় মাস বেতনভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন আউটসোর্সিং কর্মীরা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসই এখন নাভিশ্বাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেতনের দাবিতে বহুবার সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পেতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। নতুবা আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আউটসোর্সিং কর্মীরা।
সূত্রমতে, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও খুলনার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয় ২১১জনকে। পদ ভেদে প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১৬ হাজার ৬৩০ টাকায় হাসপাতালের এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকবির এন্টারপ্রাইজ। নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী প্রতিমাসের ৫ তারিখে বেতন পরিশোধ করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু কোনো শর্তই পূরণ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে টাকা ছাড় না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগের পর আউটসোর্সিং কর্মীদের বছরে দুটি উৎসব ভাতাসহ মাসের ৫ তারিখের ভেতরে বেতন প্রদান করার কথা ছিল। প্রথম দিকে কিছুটা ঠিক থাকলেও গত ৯ মাস ধরে চলছে গাফিলতি। ৯ মাস বেতনের কোনো নাম নেই। ফলে বাসা ভাড়া, যাতায়াত খরচসহ পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকেই ধারদেনা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকবির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকতেয়ার উদ্দিন বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে আমরা মাত্র ১ মাসের অর্থ পেয়েছি। আউটসোর্সিং কর্মীদের গত ৯ মাসের বকেয়া বেতনের কাগজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাস করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দ্রুতই আউটসোর্সিং কর্মীরা বেতন পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও কাগজপত্র ঠিক না থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড় সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি নিজে বহুবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি। অর্থছাড় সংক্রান্ত জটিলতা হলেও স্থিতির অর্থ দিতে বলেছি আউটসোর্সিং কর্মীদের। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।