আড়ং চেপে যাওয়ায় বেপরোয়া সজীব?

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 22:04:25

আড়ং-এর বনানী আউটলেটের সাবেক কর্মী সিরাজুল ইসলাম সজীব তার নারী সহকর্মীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগে গ্রেফতার রয়েছেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ১২০টি আপত্তিকর ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

সজীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আড়ং-এ কর্মরত অবস্থায় তিনি নারী সহকর্মীদের পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও গোপনে ধারণ করতেন। এসব ভিডিও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাদের শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে চাপ দিতেন। এতে তারা রাজি না হলে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন।

আড়ং-এর বনানী আউটলেটের এক নারীকর্মীর করা এমন একটি অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি সজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সিরাজুল ইসলাম সজীব ফেসবুক মেসেঞ্জারে সীমান্ত সৈকত নামে তার আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলেন। ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে।

এ সময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলেন এবং তার কথামতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন।

তবে বর্তমানে ঘটনাটি সবার সামনে আসার পর থেকে বিভিন্ন মহলে আড়ং-এর সামাজিক দায়িত্বশীলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আড়ং গত বছর গোপন ভিডিও ধারণের অভিযোগে সজীবকে চাকরিচ্যুত করে তাদের নিজেদের দায়িত্ব সারে। কিন্তু নিজেদের আউটলেটে নারী কর্মীদের পোশাক পরিবর্তনের গোপন ভিডিও ধারণ করা এবং শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দেওয়া সজীবের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আড়ং। এছাড়া গোপন ভিডিওগুলো উদ্ধারেরও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানামহলে আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, আড়ং যদি সজীবকে কেবল চাকরিচ্যুত না করে পুলিশের হাতে দিয়ে দিত তাহলে নতুন করে ওই নারীকর্মী যৌন হয়রানির শিকার হতেন না। কেননা তখন পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে সজীবের কাছ থেকে সকল তথ্য সংগ্রহ করে ভিডিওগুলো উদ্ধার করতে পারত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুযোগ পেত। ফলে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ওই নারীকর্মীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পেত না সজীব।

এসব আলোচনায় বিভিন্ন মহল থেকে আরও বলা হচ্ছে, নিজেদের ব্র্যান্ড রেপুটেশন বাঁচানোর জন্য সজীবের অপরাধ চেপে যায় আড়ং। ফলে সজীবের কাছ থাকা ভিডিওগুলো উদ্ধার সম্ভব হয়নি। আর এসব ভিডিও দিয়ে যৌন হয়রানির কাজ চালিয়ে যেতে থাকে সজীব। আড়ং-এর চেপে যাওয়া নীতির কারণেই সজীব বেপরোয়া হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

এদিকে বিভিন্ন মহলের এসব আলোচনার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করছে পুলিশও। এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, আড়ং তাকে চাকরিচ্যুত করার সময় যদি পুলিশের হাতে তুলে দিত, তাহলে ঘটনাটি এত দূর গড়াত না। কিন্তু আড়ং বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে এক নারীকে যৌন হয়রানি করার সুযোগ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আড়ং বিষয়টি আমাদের আগে থেকে জানালে আমরা তখনই ব্যবস্থা নিতাম। নতুন করে আরেকজন নারীকে যৌন হয়রানি করার সুযোগ পেত না সজীব।

তবে আড়ং-এর পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে সজীবের বিরুদ্ধে মামলায় তারা পুলিশকে সর্বাত্মক সাহায্য করবে। এ বিষয়ে আড়ং-এর চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।

আড়ংয়ের ট্রায়াল রুমে গোপনে ভিডিও, তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল

এ সম্পর্কিত আরও খবর