উন্নতমানের পাবলিক টয়লেটে তালা, সামনে শুকানো হয় আঁশটে!

ঢাকা, জাতীয়

নাজমুল হাসান সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 09:54:03

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) নির্বাচনের বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। কান পাতলেই নগরী জুড়ে শোনা যাচ্ছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও সেবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিংবা সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা যার যার ইশতেহার ও সেবার কথা জানান দিচ্ছেন। আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন ভোটারদের।

প্রার্থীদের অনেকেই অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও নগরবাসীর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেটের কথা কারও বক্তব্যে শোনা যাচ্ছে না। বরং গত মেয়াদে যেসব পাঁচ তারকা মানের পাবলিক টয়লেট তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো অনেক জায়গায় পরিচালিত হচ্ছে অনিয়মিত। কোথাও রয়েছে বন্ধ। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, নির্মাণের পরে এসব টয়লেট ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেই দেওয়া হয়নি।

বন্ধ পাবলিক টয়লেটের সামনে স্থানীয়রা আঁশটে শুকান, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় এমনই একটি টয়লেট চোখে পড়ে। উদ্বোধনের প্রায় দু’বছর হয়ে গেলেও এটি এখনো ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ সড়ক ধরে যাওয়ার সময় লোহারপুল ও শিকদার মেডিকেল কলেজের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত পাবলিক টয়লেটটির দরজা বন্ধ রয়েছে। টয়লেটের সামনে শুকানো হচ্ছে মাছের আঁশটে! আঁশটের গন্ধে এ টয়লেটের আশপাশ দিয়ে চলাচল কষ্টকর হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন পথচারী ও স্থানীয় জনগণ।

টয়লেটের পার্শ্ববর্তী চা দোকানদার মো. শফিকুল হক সেলিম বলেন, গত দু’বছর ধরে এ টয়লেট এভাবেই পড়ে আছে। অবকাঠামো নির্মাণের পর এটি আর ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। এর ভেতরে আসলে কিছুই নাই। নাই পানির ব্যবস্থা, বসানো হয়নি প্যান ও কমোড। তাই এখনো সবার জন্য এটা খুলে দেওয়া হয়নি।

চায়ের দোকানে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এ টয়লেট যদি খোলা থাকত, তাহলে মানুষের কত সুবিধা হতো। রাস্তার ধারে বা যত্রতত্র মানুষকে মল-মূত্র ত্যাগ করতে হতো না।

তার কথা শেষ না হতেই চা দোকানি সেলিম বলেন, আমার কাছে এ টয়লেটের চাবি দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি এটা ব্যবহার করতে পারি না। কারণ, ব্যবহারের কোনো উপায় নেই। এজন্য ঠিকাদার আর এখানে আসেন না।

কাজে আসছে না উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকাবাসীর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করেছিলেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। প্রথমে ঢাকা উত্তর সিটির জন্য এ ব্যবস্থা হলেও পরে দক্ষিণ সিটিতেও এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী একটি পাবলিক টয়লেটে সিলিং ফ্যান থাকার কথা। থাকবে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। পৃথক লকার ও হাত ধোয়ার জন্য পৃথক স্থানসহ লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থাও থাকার কথা। এছাড়া ১০ টাকা খরচ করলে থাকার কথা গোসলের সু-ব্যবস্থা। শুধুমাত্র ওয়ান টাইম গ্লাস এক টাকা দিয়ে সংগ্রহ করলেই পাওয়ার কথা বিশুদ্ধ খাবার পানি। থাকার কথা উন্নত মানের গ্লাস, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও উন্নত মানের কমোড। সার্বক্ষণিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী শিফটিং ওয়াইজ দায়িত্ব পালন করবেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টয়লেটের প্রবেশদ্বারে থাকবে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। নামাজ ও ওজুর ব্যবস্থাও থাকবে এক পাশে।

তবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের জন্য এখান থেকে বিনামূল্যে সেবা গ্রহণের সুবিধা থাকবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে উন্নত মানের কমোড। এক সঙ্গে মোট ১০ জন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন এসব টয়লেটে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর