খরস্রোতা পদ্মার বুকে ‘স্বপ্নের অবয়ব’

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 04:50:31

পদ্মা বহুমুখী সেতু থেকে: বিশ্বে খরস্রোতা নদীর তালিকায় থাকা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে স্বপ্নের সেতু। পদ্মার প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে উভয় প্রান্তে চলছে তার নির্মাণযজ্ঞ। এখন কেউ এসে নদীর উভয় তীরে দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন পদ্মা সেতুর পুরো অবয়ব।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা সরজমিনে দেখা যায়, শীতকালে পদ্মা নদী কিছুটা শান্ত থাকাই বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ।  বিভিন্ন টিম ভাগ হয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ করছে। এদিকে চলতি মাসে আরো একটি স্প্যান বসানো হতে পারে। তবে সেটির তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।

হাজারো প্রতিকূল ডিঙ্গিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এ সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে।পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের পারাপারের জন্য উন্মোচিত হবে নবদিগন্তের দুয়ার। এখন সেই অপেক্ষায় প্রহর গুণছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।  

পদ্মার বুকে একের পর এক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সেতুর পিলার

মাওয়ার স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,  'পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হওয়াই এলাকাবাসী যথেষ্ট খুশি এবং তাদের এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে সেতুকে কেন্দ্র করে। এটি এই জনপদে যথেষ্ট প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি এই সেতুর মধ্য দিয়ে দুই অঞ্চলের মানুষের একটি সংযোগ তৈরি হবে। দ্বিতল পদ্মা সেতু মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে দিয়ে এলাকার মানুষ রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবেন সহজেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজার আরো উন্নত হচ্ছে। এটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে ভবিষ্যতে পরিণত হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন তারা'।

নির্মাণাধীন স্বপ্নের সেতু

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, 'সর্বশেষ ৩২ এবং ৩৩ নম্বর পিলারের উপর বাসনো হয় ২১ নম্বর স্প্যান। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর তিন দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে । পুরো সেতুতে পিলারের সংখ্যা ৪২ টি । প্রতিটি পিলারের রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হচ্ছে। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর পর সেতুটি দাঁড়াবে ৬.১৫ কিলোমিটারে।

দেশের দীর্ঘতম এ সেতুটির আয়তন হবে ৬.১৫ কিলোমিটার

এদিকে,  মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে বাংলাদেশে আনা হয়। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি।

তাছাড়া পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, 'প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে। দুই ধাপে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার করা হবে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ও দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মিত হবে। এর মধ্যেই প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত যা চলতি মাসের ২৬ জানুয়ারি রেল চলাচলের জন্য উদ্ধোধন করা হবে'।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু

উল্লেখ্য, এ বছরের জুলাই মাস নাগাদ সকল স্প্যান বসানো শেষ হয়ে যাবে এবং আগামী বছরের জুলাই মাস জুলাই মাস নাগাদ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে বাস এবং ট্রেন একই সাথে চলাচল করবে বলে জানানো হয়। একই সাথে বেশিরভাগ পিলার প্রস্তুত হওয়ার ফলে চলতি বছর প্রতি মাসে তিনটি করে স্প্যান বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর