বরিশালে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায়!

বরিশাল, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-31 04:58:03

বরিশালে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী ও উষা রানী চক্রবর্তীকে সদ্য ঘোষিত রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তারা দুইজন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা ও দাদি।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় মনীষা চক্রবর্তীর বাবা গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. তপন কুমার চক্রবর্তীকে ৬৫ নম্বর এবং তার দাদি উষা রানী চক্রবর্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে অভিযোগ করে বলেন, এর আগে আমার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত তালিকায় নাম ঘোষণা করে একই মন্ত্রণালয়। যার গেজেটে ক্রমিক নং ১১২ পৃষ্ঠা ৪১১৩। এবং সে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পাচ্ছেন। কিন্তু এখন আবার দেখি বাবার নাম রাজাকারের তালিকায় ৬৫ নম্বরে।

বাসদ নেত্রী
সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী

তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে আমার দাদি উষা রানী চক্রবর্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার দাদা অ্যাড সুধির কুমার চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।

ডাক্তার মনীষা আরও বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে চক্রান্ত করে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেয় করা মাত্র। যা দেশ ও জাতির জন্য অপমানজনক। একটি রাজনৈতিক মহল আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের মদদে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই এমন ন্যাক্কারজনক তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অচিরেই এই নাম বাতিলেরও দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে ডা. মনীষা চক্রবর্তী তার ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিচে পুরো স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো:

‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে।

সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে।

আমার বাবা অ্যাড. তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং ১১২ পৃষ্ঠা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৫ নম্বর রাজাকার।

আমার ঠাকুরদা অ্যা. সুধির কুমার চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামীলীগ সরকারকে। আমার দল বাসদ আমাকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করাকে। মিছিল থেকে গ্রেফতার করে থানায় নির্যাতন করে ওরা বলেছিল যে আন্দোলন যেন না করি, নির্বাচনে যেন অংশ না নেই। রাজি না হওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজামিনযোগ্য মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করেছে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি।

ভয় দেখিয়ে বা বিপদে ফেলে আমাদের কিছু করা যাবে না। অভুক্ত, অর্ধভুক্ত গরীব খেটে খাওয়া মানুষ আছে আমাদের দলের সাথে। আছে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। অতীতের মতো আজ এবং আগামীতে আপনাদের পাশে পাবো সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’

উল্লেখ্য, রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা ঘোষণা করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর