ডিসেম্বরেই চালু হতে পারে ই-পাসপোর্ট

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 22:05:12

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সর্বাধুনিক ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কয়েক দফা ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে সময় পরিবর্তন হয়েছে। তবে আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্ট বিভাগ।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূলত নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণের সার্ভারের যে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা ছিল, সেটি অনেকটাই সমাধান হয়ে গেছে। তিনটি সার্ভারের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এছাড়া আনুষঙ্গিক যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলো ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হবে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরেই ই-পাসপোর্ট চালু হবে কিনা, তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। তবে সরকার চাইলে তা সম্ভব।

এর আগে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু হবে বলে জানান। এর মধ্যে ৩১ অক্টোবর ইউরোপ সফর নিয়ে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট চালু হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তারিখ নিশ্চিত করেছে।

এদিকে ০৩ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, জার্মানির একটি কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্টের কাজ শেষ করবে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষ নাগাদ অর্থাৎ আগামী মাসের শেষ নাগাদ আমরা ই-পাসপোর্ট দিতে পারব।

অন্যদিকে, পরে বাধাধরা সময়ে ই-পাসপোর্ট চালু করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা জানায় পাসপোর্ট অধিদফতর। ভিন্ন তথ্যের কারণে কবে নাগাদ ই-পাসপোর্ট চালু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তবে সব সমস্যা কাটিয়ে ই-পাসপোর্ট চালুর কাজ অনেকটা এগিয়েছে বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ই-পাসপোর্ট যেহেতু এমআরপি থেকে কনভার্ট হবে, সে ক্ষেত্রে বর্তমানে এমআরপি ডাটাবেইজে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করতে হবে। সে কাজটি অনেকটাই এগিয়েছে। এটি এতোদিন একটি বড় সমস্যা ছিল। এছাড়া সার্ভারসহ অন্য যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলো যে প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে, তাতে ডিসেম্বরে এটি চালু করা যেতে পারে।

জানা গেছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের নাগরিকদের হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট তুলে দিতে ২০১৬ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। একই বছরের ২১ জুন একনেক চার হাজার ৬৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে সংকট, ই-গেট স্থাপনের কাজে মন্থরগতি, নীতিমালা এবং ফি নির্ধারণ চূড়ান্ত না হওয়ায় ঝুলে যায় এ বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট প্রকল্পের কাজ।

পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, ই-পাসপোর্টের বেশ কিছু কাজ বাকি ছিল। গত কয়েকদিনে দ্রুত গতিতে অনেক কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) প্রয়োজনীয় সার্ভারের সঙ্গে কানেকটিভিটির কাজও অনেক এগিয়েছে। সরকার যেহেতু ডিসেম্বরে ই-পাসপোর্ট চালু করতে চায়, সেটি মাথায় রেখেই দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ই-পাসপোর্টের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে, এরই মধ্যে তিনটি সার্ভারের কাজও শেষ হয়েছে। আর আনুষঙ্গিক যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবেই চলবে। তবে সরকার যদি ডিসেম্বরে চালু করতে চায়, তাহলে সেভাবেই আমরা করব। ডিসেম্বরে চালু করার মতো প্রস্তুতি আমাদের আছে।

জানা গেছে, ই-পাসপোর্টে বিদ্যমান বইয়ের সঙ্গে একটি ডিজিটাল পাতা (ডাটা পেজ) দেওয়া হবে। ওই ডিজিটাল পাতায় উন্নতমানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো থাকবে। এতে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। ১০ বছর মেয়াদি এসব ই-পাসপোর্টের ডাটা পেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, চোখের আইরিশ ও ১০ আঙ্গুলের ছাপ।

বিদেশ ভ্রমণের সময় কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুত পাসপোর্টধারীর সব তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। এর সবচেয়ে সুফল পাওয়া যাবে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের সময়।

প্রথম পর্যায়ে প্রধান কার্যালয়সহ ঢাকার তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এরপর সারাদেশে ও পর্যায়ক্রমে বিদেশ থেকেও ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিআইপি) তৈরি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সব কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করে পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদফতর। বর্তমান এমআরপি ব্যবস্থা থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর