বঙ্গভবন থেকে টেলিফোন করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের জেলগেটে প্রবেশে বাধা না দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্য হলো—তাদের (জাতীয় চার নেতা) যখন হত্যা করতে যায় তখন বঙ্গভবন থেকে কারাগারে টেলিফোন যায়। খুনি মোশতাক বেঈমান-মোনাফেক টেলিফোন করে নির্দেশ দিয়েছিল এদের ঢুকতে দিতে।”
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “কারাগারে এই নেতাদের (জাতীয় চার নেতা) বন্দী করে রাখা হয়েছে। পারমিশন ছাড়া কোনদিন কাউকে কারাগারে ঢুতে দেওয়া হয় না। জেল অথরিটি তাদের (হত্যাকারীদের) বাধা দিয়েছিল—না ঢোকা যাবে না। তখন বঙ্গভবন থেকে টেলিফোন যায়। এমনকি খুনিরা যখন অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে যায় সেখানেও জেল অথরিটি থেক বাধা দেওয়া হয়েছিল। তখনও বলা হয়—‘এরা যেভাবে ঢুকতে চায় সেভাবেই যেন ঢুকতে দেওয়া হয়’।”
“ধোঁকা দেওয়া হয়েছিল। এরা আলোচনা করতে যাচ্ছে, এরা কথা বলবে, আলোচনা করবে—এ কথা বলে এদের ঢুকতে দেওয়া হয়।”
তৎকালীন সরকার জাতীয় চার নেতার খুনিদের নিরাপদে দেশত্যাগের ব্যবস্থাও করে দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোশতাকের পতন যখনি অনিবার্য হয়ে পড়লো তখন ওই খুনীদের সাথে সাথে প্লেনে করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। প্রথমে তারা ব্যাংককে নিয়ে যায়। সেখানে বসে তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তাদের ভিসার ব্যবস্থা করে কোন দেশে যাবে সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয়। এর সাথে কারা জড়িত সেটাও কিন্তু ইতিহাসে আছে।”
জেল হত্যা মামলার বিচার প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, “জেল অথরিটি এই ঘটনার পর থানায় একটা জিডি করে রেখে দেয়। ওই জিডি করেছিল বলে ওই মামলাটা করা সহজ হয়েছিল। আমি ’৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর থেকেই চেষ্টা করেছিলাম এই মামলা করার। যেহেতু ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি ছিল তাই আমার মামলা করারও কোনো অধিকার ছিল না। তারপরেও ’৯৬ সালে আমরা সরকারে আসার পর সেই অর্ডিনেন্স বাতিল করে দিয়ে এই হত্যার বিচার করেছি।”
“১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর বলা হতো এটা শুধু একটা পরিবারকেই হত্যা। কিন্তু ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের পর দেশবাসীর কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এটা ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের কাজ। তারা প্রতিশোধ নিয়েছিল যে, বাংলাদেশ কেন স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র!”
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, “মোশতাকের পতনের পর বিচারক সায়েম হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। সেই সময় মার্শাল ল’ জারি করা হয়। সাধারণত চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হয় রাষ্ট্রপতি। তখন জিয়াউর রহমান সায়েম সাহেবকে গিয়ে বলেছিল—আপনি এই পদে থাকতে পারবেন না। আপনি এই পদ দিয়ে দেন। সায়েম সাহেব তাকে চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর করে দেন। একাধারে সেনাপ্রধান ও চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এরপর জিয়াউর রহমান তাকে গিয়ে বলেন আপনি এখন অসুস্থ। আপনি দেশ চালাতে পারবেন না। এখন আমাকে দেশ চালাতে হবে। আমাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেন।”
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সুধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র নির্মমভাবে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে হত্যা করে।