চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর টাকায় আপোষের চেষ্টা

, জাতীয়

MH Tanvir | 2024-10-25 19:08:17

রংপুরের মিঠাপুকুরে চোর সন্দেহে আয়নাল ইসলাম নামে এক যুবককে রাতভর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১ টা ৩০ মিনিটে ধলাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে থেকে আয়নাল ইসলামকে তুলে নিয়ে পাশের গ্রাম বড় মির্জাপুরে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

জানা গেছে, নিহত যুবক উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ধলাপাড়া গ্রামের মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে আয়নাল ইসলাম (৩০)। যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরেই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলেও ঘটনাস্থলে যায়নি পুলিশ - এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে অর্থের বিনিময়ে হত্যার বিষয়টি দফারফা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযুক্তরা।

হত্যার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী হাজেরা খাতুন বলেন, ‘রাইতত ৩ টা মোটরসাইকেল হামার পাশের গ্রামের রেজা, আশিকুর মিলিয়া৭ থেকে ৮ জন রড দিয়া মারতে মারতে আইনুলক কয় তুই খুন করি আসি এটে আছিস। তোর চুরি করা ব্যাগ কোনটে? ইয়ার পর জোর করি টানা হেছরা করি আইনুলক একনা দূরত নিয়া গিয়া আবার মারে। আইনুল তখন মাইরের চোটত ওবাবারে মাওরে করি চিল্লায়। খানিকপর ওটে থাকিয়া কোনটেবা নিয়ে যায়া ছাওয়াটাক সারা রাইতোত পিটিয়া মারি ফেলাইছে।’

স্থানীয়রা জানান, রাত ৯ টায় দূর্গাপুর ইউনিয়নের বড় মির্জাপুর গ্রামের মোছাঃ মনোয়ারা বেগমের (৫৫) বাড়িতে সোনার চেইন চুরি করার সময় চোরের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় মনোয়ারা বেগম। আহত মনোয়ারার আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা গিয়ে গুরুতর আহত মনোয়ারা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে মিঠাপুকুর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপরেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করে স্থানীয় রেজা, আশিকুরের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮ জন তিনটি মোটরসাইকেল যোগে পাশের গ্রাম ধলাপাড়ার আয়নুলকে রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে তুলে নিয়ে আসে। রাতভর নির্যাতনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে অপরিচিত ভ্যানযোগে মিঠাপুকুর হাসপাতালে পাঠায়।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার আইনুলের পিতা না থাকায় অভিভাবকহীনতার সুযোগে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যস্থতায় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অর্থের বিনিময়ে দফারফার অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে শঠিবাড়ি নতুন গরুহাটি সংলগ্ন শফিয়া সর্দারের চাতালে স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান শহিদুলের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তিসহ নিহত আইনুলের মা ও বোনকে দেখা যায় আপস মীমাংসার মিটিংয়ে।

এবিষয়ে কথা বলতে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

নিহত আইনুলের বোন শিরিনা বেগম জানান, ‘মোর ভাই রাইতোত ভাতেই খায় নাই। ওরা তুলি নিয়া যায়া এমন করি ডাংগে মারিল! মিটিং হইলো এটে। এলা আপোষ করার জইনতো প্রতিমাসে মোর মাওক ৮ হাজার টাকা দিবার চাওছে।’

নিহত আয়নালের বৃদ্ধা মা জানান, ‘চেয়ারম্যান মেম্বার বসিয়া মীমাংসা করি দেইল। মোক প্রতিমাসে আট হাজার করি ট্যাকা দিবে। এই জন্যে মোক কেউ মামলা করবার দিবার চাওছে নাহ। মোর ভালো ছইলটাক বাড়ি থাকি তুলি নিয়ে যায়া ডাংগে মেরা ফেলাইল। এইটা কি দুনিয়ার বিচার? ’

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ওসি (তদন্ত) মোস্তফা কামাল জানান, সকাল ৮ টায় খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মরদেহ নিয়ে আসি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। এঘটনায় থানায় এখনো কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর