গাজীপুরের ৬৬ ভাগ বন ও জলাশয় গায়েব

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-10-23 10:00:05

রাজধানী লাগোয়া গাজীপুর জেলায় গত দুই যুগে বনভূমি ও জলাশয় কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। উল্টো দিকে বেড়েছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে উন্মুক্ত জায়গা। করা হয়েছে বন দখল, ভরাট করা হয়েছে জলাশয় এবং কাটা হয়েছে গাছ।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ‘পরিবেশদূষণে বিপর্যস্ত গাজীপুর: উত্তরণ উপায়' শীর্ষক আলোচনায় উপস্থাপন করা এক গবেষণা জরিপে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গাজীপুর পিটিআই অডিটরিয়ামে এই আলোচনা সভা হয়। সেখানে উপস্থাপন করা গবেষণা জরিপটি করছে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। সহায়তা করেছে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন (বিআরএফ), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।

২০২৩ সালে ওই গবেষণা জরিপ করা হয়। এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু নদী হলেও এতে পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের বর্তমান অবস্থা, ক্রমবিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে।

গবেষণা বলছে, ২০০০ সাল থেকে গত ২৩ বছরে গাজীপুরের পরিবেশের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। জেলায় ২০১১ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৩০ লাখের কাছাকাছি; ২০২২ সালে তা এসে ঠেকেছে ৫০ লাখের বেশি। দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮ হাজার ১২৬ জন বসবাস করছে।

পরিবেশগত সমীক্ষা বলছে, ২০০০ সালে জেলায় মোট জলাভূমির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৬২ হেক্টর বা মোট আয়তনের ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬৮ হেক্টর বা মোট আয়তনের ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ।

একটি জেলার মোট আয়তন অনুযায়ী অন্তত ৭ থেকে ১৪ শতাংশ জলাভূমি থাকতে হয়। সেই হিসাবে পিছিয়ে গাজীপুর। এ ছাড়া জেলায় তুরাগ, বালু, বংশী, শীতলক্ষ্যা, চিলাইসহ নদ-নদীগুলো শিল্পবর্জ্যসহ নানামুখী দূষণের শিকার; যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি জেলার মোট আয়তন অনুযায়ী ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয় । ২০০০ সালে গাজীপুরে বনভূমির পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৪৪ (৩৯ হাজার ৯৪৩ হেক্টর) শতাংশ। ২০২৩ সালে জেলায় বনভূমির পরিমাণ কমে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে (১৬ হাজার ১৭৪ হেক্টর) নেমে এসেছে।

গাজীপুরে ২০০০ সালে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ২৭০ হেক্টর; ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৩০৭ হেক্টরে। ২০০০ সালে জেলায় মানুষের বসতি ছিল ৮৫ হাজার ৫৭৩ হেক্টর এলাকায় (আয়তনের ৫০.২১ শতাংশ); ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৭৯ হেক্টর (আয়তনের ৬৫.৮৩ শতাংশ)।

২০০০ সালে শিল্প এলাকা বিস্তৃত ছিল ৯ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৮৭৭ হেক্টরে। ২০০০ সালে জেলায় খোলা জায়গার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৪৩৬ হেক্টর; ২০২৩ সালে যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩১৬ হেক্টরে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন এবং নগরায়ণের বিধ্বংসী প্রভাবের কারণে গাজীপুর এখন দেশের পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখানে উল্লেখযোগ্য হারে বনভূমি, জলাভূমি দখল করা হচ্ছে। বায়ু ও পানি উভয়ের দূষণের মাত্রা অতি উচ্চ।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রিভার চেয়ারম্যান মনির হোসেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন। জরিপ তথ্য উপস্থাপন করেন আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেলা, বিআরএফ, আরডিআরসি এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরপর আগত বিভিন্ন দফতরের ও পেশার মানুষ তাদের মতামত প্রদান করেন। গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, 'বন দখলের অভিযোগ প্রতিদিনই আমরা পাচ্ছি। আলোচনা ও সালিসও করতে হচ্ছে। তবে এসব দখলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রত্যেকের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হবে।

বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, ‘দখল-দূষণ চাইলেও সরকার বা বেলা একা সমাধান করতে পারবে না। আমরা নগরায়ণ চাই, উন্নয়ন চাই; কিন্তু সেই উন্নয়ন চাই না যে উন্নয়ন আমাদের পরিবেশকে দেখে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর