অটোরিকশার ফলে রংপুরে যানজট, শিথিল ট্রাফিক বিভাগ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-10-21 18:19:45

রংপুর নগরীতে অনিবন্ধিত অটোর দাপটে দিন দিন বেড়েই চলেছে যানজট৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘ যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। সরকার পট পরিবর্তনের পর তীব্র যানজটের এমন পরিস্থিতিতে দুই মাস ধরে নেই ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতা। ট্রাফিক বিভাগের শিথিলতায় অনিবন্ধিত অটোরিকশায় জরিমানা কিংবা মামলার কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় তোয়াক্কা করছেন না চালকরা। এতে করে অনিবন্ধিত গাড়ি নিয়ে শহরের বাহিরের অটোরিক্শা চালকরাও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়াভাবে। ফলে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে অটোর লাইসেন্স দেয়া আছে ৫৩১১ টি ও চার্জার রিক্সার লাইসেন্স ৫৮০০ টি। অথচ প্রতিনিয়ত নগরীতে প্রায় ৩০,০০০ অটো ও চার্জার রিক্সা চলাচল করছে। অটো রিক্সার লাইসেন্সের ফি ছিল ১৭০০০ টাকা, চার্জার রিক্সা ৪০০০টাকা। ৩ বছর থেকে নতুন লাইসেন্স দেয়া বন্ধ আছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ টি লাইসেন্সের নাম পরিবর্তনের আবেদন পরে।

তীব্র যানজট নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের ট্রেড শাখার প্রধান লাইসেন্স পরিদর্শক শামীম হোসেন বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে নির্দিষ্ট লাইসেন্স দেয়া হয়েছে দুই তিন বছর আগেও। নতুন করে লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে। যানজট খেকে মুক্তি দিতেই নতুন লাইসেন্স বন্ধ। তবে এক জনের লাইসেন্স অন্যরা কিনে নিচ্ছে৷ যানজট নিরসনের জন্য প্রায় ১৫ দিন আগে ট্রাফিক বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তেমন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

অটো রিকশার লাইসেন্স খারিজ করতে আসা ৭ নং ওয়ার্ড চওড়াহাটের বাসিন্দা রাজ্জাকুল বলেন, ৫-৬ বছর আগে লাইসেন্স কিনছিলাম ২০ হাজার টাকা দিয়া। বিক্রি করলাম ৩৫ হাজার টাকায়।

চার্জার রিকশাচালক হৃদয় বলেন, সরকার পরিবর্তন হইছে, আইনো পরিবর্তন হইছে। পুরা বাংলাদেশের অটো এখন অমপুরোত আইসে। এইজইনতে যানজট।

রংপুর উপজেলার গজঘন্টা থেকে রিকশা চালাতে আসা আশেক আলী বলেন,‘পুলিশ শুধু দাড়ে দাড়ে দেখে, এ্যালা পুলিশের হাতোত কোন ক্ষমতা নাই। আগোত মামলা দিছিল,জরিমানা কচ্ছিল সেই ভয়েতে এতি আসোনা নাই গাড়ি ধরি। এ্যালা আর মামলার ভয় নাগে না, পুলিশ কিছু কয়না হামরা হামার মত শান্তিত গাড়ি চালে বেড়াওচি। এইজইনতে এতি আলছি ভাড়া মারি। কিন্তু শহরোর মেলা গাড়ির জটলাতে ১০ টাকার ভাড়া মাইরবার জইনতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়েয়া থাকা নাগে।’

নগরীর সিটি বাজারের সামনে গাড়ি নিয়ে যানজটে আটকে পরে থাকা রিকশাচালক চিনিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহরোত লাইসেন্স ছাড়া গাড়িচালকের আমদানি হইছে এইজনতে যানজট। এ্যালা পুলিশ ভয়েতে মামলা দেয়না সবাই শহোরত আসি ভিড় জমাইছে। মোর গাড়ি লাইসেন্স আছে কিন্তু ভাড়া মাড়তে মেলা জাগাত যায়া আধা ঘন্টার মত আটকি থাকা নাগে। এইতন করি গাড়ির জমা ৩০০ টাকা তুলিয়া বাড়ি খরচের টাকা ওঠে না। হামরা বউ ছাওয়া ধরি বাঁচমো ক্যাং করি।’

সরকার পটপরিবর্তনের পর ট্রাফিক বিভাগের শিথিলতায় নিবন্ধনহীন অটো ও চার্জার রিকশার দাপটে স্থবির হয়ে পড়েছে রংপুর নগরী। সিটি কর্পোরেশন বলছে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য

জ্যামে আটকে থাকা যাত্রী আবু সায়েম বলেন,পিছিয়ে পরা রংপুরে আমরা কবে আলোর মুখ দেখবো জানিনা। তারউপর সমস্যার শেষ নেই। রংপুরকে এখন অটোর শহর হিসেবে চিনে মানুষ। সকাল, দুপুর, শহরে বের হতে বিরক্ত হয়ে যাই। প্রশাসনিক কোন জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় এই যানজট একদিনের না প্রতিদিনের সমস্যা। ট্রাফিক বিভাগ থেকে অভিযান পরিচালনা করলে আমরা কিছুটা মুক্তি পেতাম।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং ট্রাফিক বিভাগের ডিসি নিয়োগ হলে সড়কে কঠোর পদক্ষেপে আবারও অভিযান হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বিপিএম মুঠোফোনে জানান, নিবন্ধনহীন অটোরিকশাগুলোর ব্যাপারে চেকপোস্টগুলোতে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর