ময়মনসিংহে বন্যায় ধান-সবজিতে ক্ষতি ৩২২ কোটি টাকা

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। মানুষজন ফিরেছে নিজ নিজ বাড়ি ঘরে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতের চিহ্ন। কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে দুঃখ হয়ে। আকস্মিক বন্যায় ধান ও সবজি মিলিয়ে তিন উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে মোট ৩২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। এর মধ্যে আমন ধানে ৩১৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং সবজিতে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ধোবাউড়ায় ১০ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমির ধান, ১৮ হেক্টর জমির শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হালুয়াঘাটে ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর ধান, ৪৫ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুলপুরে ৩ হাজার ৮৯৩ হেক্টর জমির শাক-সবজি, ৪৫ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে।

এর মধে ধোবউড়ায় ধান চাষে ক্ষতি হয়েছে ১৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, শাক-সবজিতে ক্ষতি ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। হালুয়াঘাট ধান চাষে ক্ষতি হয়েছে ১৩১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, সবজিতে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফুলপুরে ধান চাষে ক্ষতি ৪৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, শাক-সবজিতে ক্ষতি ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ধান ও সবজি মিলিয়ে তিন উপজেলায় মোট ৩২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, তিন উপজেলায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোন খাতে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের জন্য স্ব-স্ব বিভাগে চিঠি দেওয়া আছে। জরিপের পর বিস্তারিত জানানো হবে।

ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের এক কৃষক জানান, তার ৪০ একর ফিশারির মাছ ও ১৫০ একর ফসলের ধান তলিয়েছে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি ৪০ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছেন, সেই সঙ্গে ধানও। কখনো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে তিনি ভাবেননি। সরকার সহযোগিতা না করলে তার পক্ষে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

ফুলপুর উপজেলার সিংহেস্বর গ্রামের এক কৃষক জানান, আমার ধানের জমি ও শাক-সবজির ক্ষেত সবই নষ্ট হয়ে গেছে। কি খাইয়া বাঁচবো জানি না। সরকার আমাদের দিকে নজর না দিলে আর কোনো উপায় থাকবে না।

ফুলপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল হাসান কামু বলেন, কৃষকদের পুনর্বাসনের লক্ষে কৃষকদের জমায়েত করে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব ফসলি জমিতে সরিষা, ভূট্টা অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। এসব ফসলের বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. নাসরিন আক্তার বানু বলেন, বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের সহযোগিতার লক্ষ্যে পরামর্শের পাশাপাশি সহযোগিতা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেছি। সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।