ভিমরুলের কামড়ে মৃত্যু: পাশাপাশি কবরে শায়িত বাবা, ছেলে ও মেয়ে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2024-10-13 17:55:43

পাশাপাশি কবরে শায়িত হয়েছে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে মারা যাওয়া বাবা ও দুই শিশু সন্তান। এ ঘটনায় পরিবার ও স্বজনদের পাশাপাশি শোকে কাতর স্থানীয়রাও।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার পোড়াকান্দলিয়া ইউনিয়নের দুধনই গ্রামে একই সঙ্গে তিনজনের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ব‍িপুল সংখ‍্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করে। এ সময় হাজার হাজার মানুষের অশ্রুসজল বিদায়ে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে পাশাপাশি তিনটি কবরে মৃত বাবা, ছেলে ও মেয়ের দাফন করা হয়।

পোড়াকান্দলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জরুল হক বলেন, আমাদের এলাকায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আর দেখিনি। একই সঙ্গে এক পরিবারের তিনজনের এক সঙ্গে জানাযা আগে কখনো হয়নি।


তিনি বলেন, অনেক ভালো মানুষ ছিল মাওলানা আবুল কাশেম (৫৫)। অভাব অনটনের মধ‍্যেও পাঁচ সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিল তাঁর সংসার। কিন্তু ভিমরুলের কামড়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন পরপারে। বতর্মানে তাঁর সংসারে স্ত্রী ছাড়াও আরও দুইটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

মৃত আবুল কাশেমের ভাতিজা মো. মোকসেদুল ইসলাম বলেন, ভাইবোনের মাঝে সবার বড় ছেলে হেদায়েতুল্লাহ। সে কোরআনে হাফেজ হয়ে একটি মাদরাসা শিক্ষকতা করে সংসারে বাবার সঙ্গে হাল ধরেছিল। তার ছোট ভাই এহসানুল্লাহ হাফেজি শেষ করে বতর্মানে মাওলানা লাইনে লেখাপড়া করছে। আর বোনদের মধ‍্যে বড়জনের ইতোমধ্যে বিয়ে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে চাচা আমার দোকানে বসেছিল। কথা ছিল বাড়ি যাওয়ার আগে আমার ঘরে খেয়ে যাবে। তখন চাচা একটি ন‍ৌকায় তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ির পাশে একটু দূর থেকে রান্নার লাকড়ি আনতে যায়। সেখানে বাঁশ ঝাড়ে থাকা একটি ভিমরুলে চাকে হঠাৎ আঘাত লাগে ন‍ৌকার লগিতে। এতে ভিমরুল আক্রমণ করলে মারাত্মক ভাবে আহত হয় তারা। এ সময় আমার চাচা তার শিশু সন্তানদের বাঁচাতে নিজের পিঠ পেতে দিয়ে ওদের বুকের নিচের ঝাপটে রেখে ছিলেন। কিন্তু কোনকিছুতেই শেষ রক্ষা হয়নি। পরে আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে একে একে সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এদিকে এ ঘটনার খবরে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন। এ সময় তিনি মৃতদেহ দাফন কাপনের জন‍্য বিশ হাজার এবং ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক দশ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন।

প্রসঙ্গত, শনিবার (১২ অক্টোবর) দিনে ও রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাওলানা আবুল কাশেম (৫০), মেয়ে লাবিবা আক্তার (৮) ও ছোট ছেলে সিফাতুল্লাহ (৬)।

ধোবাউড়া উপজেলার দুধনই গ্রামের চান্দু মেম্বারের ছেলে মাওলানা আবুল কাশেম দুধনই বাজার জামে মসজিদে ইমামতি করতেন এবং তার মেয়ে লাবিবা ইদারাতুল কোরআন মাদরাসায় প্রথম শ্রেণীতে পড়তেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর