নিম্নচাপের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে, ভয়ে জড়সড় হয়

বরিশাল, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 22:39:03

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১১ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে বরগুনা, পিরোজপুর জেলার অনেক পরিবার। এসব এলাকায় সিডর বিধ্বস্তদের চাপা কান্না এখনো কান পাতলেই শোনা যায়। এখনো নিম্নচাপের কথা শুনলেই উপকূলের মানুষ আঁতকে ওঠে, ভয়ে জড়সড় হয়ে যায়।

বরগুনার মাঝের চরের বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, সিডরে তার মা জয়গুন বেগম, ভাবি খাদিজা আক্তার ও ভাইয়ের ছেলে আসিফ মারা গেছে। সিডরের সপ্তাহ খানেক পরে বিলকিসের ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ওই সময় তার নাম রাখা হয় ‘সিডর’। সিডরের স্মৃতি নিয়েই বড় হচ্ছে সে।

তবে বিলকিস জানালেন অন্য কষ্টের কথা। সিডরে তাদের পরিবারের কয়েকজন বেঁচে গেলেও লড়াই থেমে নেই। লড়াই করেই তাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

শুধু বিলকিস বেগম নয় ওই এলাকার ইয়াসিন আলী দফাদার, জাফর মল্লিক, আলমগীর হোসেন, খালিদা আক্তার সকলের অবস্থা একই।

জাফর মল্লিক জানান, সিডরে তাদের একমাত্র ছেলেটি মারা গেছে। স্বামী-স্ত্রী বেঁচে থাকলেও শান্তিতে নেই। উপরে খোলা আকাশ, পায়ের তলায় মাটি নেই। চাষাবাদের কোনো জমি নেই। বিষখালী নদীতে মাছ ধরে তার সংসার চলছে।

খালিদা আক্তার জানান, সিডরের রাতে তাদের ঘরটি ভেঙে যায়। তখন তারা আবদুস সোবহান নামে একজনের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেই ঘরটিও ভেঙে যায়। সাঁতার কেটে তারা বাঁচার চেষ্টা করলেও তার দুই মেয়ে ঝরনা ও শিরিনা মারা যায়। এ ঘটনার পরের দিন সকালে বেড়িবাঁধের পাশে তার মেয়েদের দাফন করা হয়। এখন নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মেয়েদের কবরও হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান খালিদা।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) ভয়াবহ সিডর দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বরগুনা প্রেসক্লাব। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৮টায় শোক র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে গর্জনবুনিয়া গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১১ বছর পার হলেও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী সাপলেজা ইউনিয়নের ক্ষেতাছিড়া গ্রামের বেড়িবাঁধ এখনো সংস্কার হয়নি। ওই সময়ে সাপলেজা ইউনিয়নে ৮৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের এই দিনে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার পানি আঘাত হেনেছিল বরগুনায়। পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীপাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৬৮ হাজার ৩৭৯টি ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বরগুনায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ১৫৬ জন।

তবে বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার এবং আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০ জন। মাত্র আধাঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূল। প্রবল তোড়ে বেড়িবাঁধ উপচে এবং ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তুপে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর