শীতকালীন ও মৌসুমি সবজি ফুলকপিকে পাওয়া যায় খুব অল্প সময়ের জন্য। সুস্বাদু ও অগণিত উপকারিতায় ভরপুর এই সবজিটি বাজারে সহজলভ্য হলেই প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের অংশ করে নেওয়া হয়। ফুলকপি শুধু দেখতে কিংবা খেতেই ভালো নয়, এর গুণাগুণগুলোও আকর্ষণীয়।
নিয়মিত ফুলকপি গ্রহণে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, যা রক্তনালীকাকে সুস্থ রাখে। এই উপকারিতা পাওয়া যায় ফুলকপিতে থাকা গ্লুকোর্যাফ্যানিন (Glucoraphanin) ও ভিটামিন-কে থেকে। বাধাহীন রক্ত চলাচলের ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে, যা থেকে সচারচর কোন ধরনের হৃদরোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় না।
ফুলকপিতে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দ্রবণীয় আঁশ, যা খাদ্য ভালোভাবে পরিপাক হতে এবং শরীর থেকে টক্সিন উপাদানের সাথে পরিপাককৃত খাদ্যকে মলের সাহায্যে বের করে দিতে কাজ করে। এতে থাকা গ্লুকোসাইনোলেট (Glucosinolate), গ্লুকোর্যাফ্যানিন (Glucoraphanin) ও সালফরাফেন (Sulforaphane) পাকস্থলিকে সুস্থ রাখতে ও এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হেলিওব্যাকটার পাইলোরি জন্মাতে বাধাদান করে। এর সাথে পেটের ছোটবড় সমস্যা ও স্টমাক আলসার থেকে প্রতিরোধেও সাহায্য করে এই সবজিটি।
র্যাসপাইরেটরি প্যাপিলোমাটসিস (Respiratory Papillomatosis) এর সমস্যাটি হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (Human Papillomavirus) থেকে হয়ে থাকে। যা ভোকাল কর্ডসহ ফুসফুসের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, ক্রুসিফেরাস ঘরানার সবজি (ফুলকপি, ব্রকলি, বাঁধাকপি) গ্রহণে এই ধরনের সমস্যা বিস্তারের হারকে প্রতিরোধ ও স্লথ করা সম্ভব হয়।
আমেরিকান ডায়বেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, দৈনিক ৩-৫ সার্ভিং স্টার্চবিহীন সবজি গ্রহণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এক সার্ভিং হলো ১/২ কাপ রান্না করা অথবা ১ কাপ কাঁচা সবজি। ক্রুসিফেরাস ঘরানার সবজি তথা ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি হলো স্টার্চবিহীন সবজি। যা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলেও কোন সমস্যা দেখা দিবে না, বরং এতে থাকা আঁশ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
বেশ কিছু পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে, ফুলকপিতে রয়েছে indole-3-carbinol. যা মূলত কেমোপ্রিভেনটিভ ও অ্যান্টি-ইস্ট্রোজেন প্রভাব তৈরি করে শরীরে। এতে করে জরায়ুমুখের ক্যানসার কোষ বৃদ্ধিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
ফুলকপিতে থাকা indole-3-carbinol এবং সালফরাফেন হলো এক প্রকারের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যা শরীরের ডিটক্সিফাইং এনজাইমকে নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকর করতে কাজ করে।
উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে ফুলকপি থেকে পাওয়া যায় সালফরাফেন। এই উপকারী উপাদানটি নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ (Neurodegenerative Diseases) কে প্রতিরোধে কাজ করে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণার তথ্য মতে, ফুলকপি গ্রহণে আলঝেইলামার রোগীদের মস্তিষ্কেও ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
ফুলকপিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রোগ-প্রতিরোধকারী পুষ্টি উপাদান। অন্যান্য উপকারী ও স্বাস্থ্যকর উপাদানের সাথে ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন-সি ইনফেকশনসহ ছোট-বড় বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধের প্রতিরক্ষামূলক বেষ্টনী গড়ে তোলে।
আরও পড়ুন: মৌসুমি ফুলকপির মোগলাই রেজালা