বাঙালি নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তাভাবনাকে অচল বলে কটাক্ষ করলেন মোদি সরকারের রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। তিনি বলেন, 'অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ভালো কথা, তবে তিনি বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী। সেটা সবার জানা।'
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, 'কংগ্রেসের ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে অভিজিতের প্রকল্প 'ন্যায়'কে (ন্যূনতম আয় যোজনা) সমর্থন করেছিল। পরিণতি ভারতবাসী সেই মত প্রত্যাখ্যান করেছিল। অর্থাৎ ভারতবাসী যে আদর্শকে গ্রহণই করেনি সেই নোবেল জয়ীর চিন্তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।'
কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে মোদি সরকার নোবেল জয়ী এ অর্থনীতিবিদের করা সমালোচনায় বেশ ক্ষুব্ধ।
এর আগে তার নোবেল জয়ের পরই কর্ণাটক রাজ্যের বিজেপি এমপি প্রথম বিরূপ সমালোচনা করেছিলেন। এরপর মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় কটাক্ষ করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদবী পরিচয় নিয়েও। তথাগত রায় প্রশ্ন তোলেন, তিনি বাঙালি নাকি মারাঠি? 'নামের মাঝখানে তিনি বিনায়ক শব্দটি লেখেন কেন?' এরসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাহুল সিনহাও নোবেল জয়ীকে নিয়ে কুমন্তব্য করেছেন। রাহুলের কথায়, 'যাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদেশি, তারাই নোবেল পান।'
তবে অমর্ত্য সেনের পর ফের এক বাঙালি অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ায় ভারতসহ বাঙালিদের মধ্যে খুশির বাতাবরণ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বাঙালি সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করেছিল প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশও। প্রতিটি দেশ থেকেই এসেছিল শুভেচ্ছা বার্তা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি যিনি কোনো ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতেই অভ্যস্ত, তার পক্ষ থেকে অভিনন্দন বার্তা আসতে সময় লেগেছিল প্রায় ৪ ঘণ্টার বেশি। যা নিয়ে ভারতে কম জল্পনা হয়নি।
কারণ যতক্ষণ না প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ পাচ্ছিল, ততক্ষণ ভারতের কোনো মন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও অভিনন্দন বার্তা প্রকাশ পায়নি। অবশেষে ঘটনার দিন রাতে মোদির অভিনন্দন বার্তা প্রকাশ পাওয়ার পর, রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীরা অভিনন্দন জানান নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
কিন্তু এই নোবেল জয়ী মোদির অর্থনীতির সমালোচনা করে আসছেন প্রথম থেকেই। মোদি প্রথম ক্ষমতায় আসার পর, অর্মত্য সেনের পাশাপাশি তিনিও নোট বাতিলসহ অর্থনীতির বিষয়ে নানা সমালোচনা করেছিলেন। বর্তমানে ভারতের অর্থনীতি পড়ে যাওয়ার অন্যমত কারণ হিসেবে নোট বাতিলকেই দায়ী করেছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নোটবাতিল সিদ্ধান্ত যে ভারতের মতো দেশে মোটেই সুখের বার্তা বয়ে আনবে না তা তিনি অনেক আগেই প্রকাশ্যে বলে আসছিলেন।
এমনকি নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর সুইডিশ অ্যাকাডেমির আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনেও বলেছিলেন, 'অর্থনীতির বিশেষ কিছু টার্গেটের কথা ভুলে গিয়ে আগে দেখতে হবে কীভাবে গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছবে। তা হলেই একমাত্র আর্থিক নীতি সঠিক পথে আসবে।'
ফলে স্বভাবতই ক্ষুদ্ধ ভারতের শাসকদল ও তাদের সমর্থকেরা। তবে বিজেপিসহ রেলমন্ত্রীর মন্তব্যের সরাসরি সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম এবং কংগ্রেস। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মোদি সরকার বাঙালি বিদ্বেষী। তাই রেলমন্ত্রী এ রকম সমালোচনা করেছেন। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি, এটাই কি তার অপরাধ? তার নোবেল প্রাপ্তি বাঙালির গর্ব। তিনি কোন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী এটা অপ্রাসঙ্গিক। বাঙালির নোবেল জয়ীর অসম্মান আমরা কোনো ভাবেই মেনে নেবো না।'
এনিয়ে কংগ্রেস এমপি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'পীযূষ গোয়েলের মতো মানুষের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি কী আশা করা যায়? তিনি তো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কে আবিষ্কার করেছেন তাই জানেন না। রেলমন্ত্রীর চেয়ারে অনেকে আসবেন যাবেন। নোবেল জয়ীর সম্মান চিরস্থায়ী।’
সিপিআইএম -এর নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘পীযূষ গোয়েলের কাছে এটাই প্রত্যাশিত। নোবেল জয় ভারতের গৌরব। তা নিয়েও রাজনীতি করে বিজেপি।’