ক্ষুধা সূচকের নিরিখে এবারও অনেক নিচে রইল ভারত। ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’র প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০২, যা গতবারের চেয়ে দেশটি এক ধাপ উপরে তুলতে পারলেও মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার সময় অর্থাৎ ২০১৪ সালে এই অবস্থান ছিল ৯৩।
চলতি সরকারের আমলে পরিস্থিতি এতটাই বেহাল যে অর্থনৈতিক জর্জরিত পাকিস্তানের মতো দেশও ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের স্থান সেখানে ৯৪। এছাড়া তালিকায় ভারতের থেকে উপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল। এর মধ্যে বাংলাদেশে ক্ষুধার্তের সূচকের অবস্থান ৮৮।
রিপোর্ট দেখে ভারতের বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ভারতের খারাপ ফলের জন্য গোটা দক্ষিণ এশিয়ার গড় মান কমে গিয়েছে।
বছরভর ক্ষুধা এবং অপুষ্টির মতো বিষয়গুলোর উপর নজর রেখে এই ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’ তালিকা তৈরি করে। পরিণতি এতো খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ভারতের মতো দেশে ক্ষুধার্তের সংখ্যা কমানো বা বিশ্ব তালিকায় নিজেদের ওপরের দিকে তুলে আনার তেমন কোনো নিশ্চিত পরিকল্পনাই নেই। বরং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বদলে নাগরিকদের নিত্য দিনের অভ্যাস বদলের কথা বলে দিচ্ছে তারা।
এ নিয়ে মোদি সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. কে সুব্রক্ষ্মণ্যম বলছেন, ‘বাড়তি খাবার বাড়ির কাজের লোক বা ড্রাইভারকে দেওয়ার বদলে যারা একেবারেই খেতে পায় না, সে সব ক্ষুধার্তদের দিন। খাবার নষ্ট করার অভ্যাস বদলান।’
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হর্ষবর্ধন আরও এক ধাপ এগিয়ে মত দিয়েছেন, ‘কম খান। সুস্থ থাকুন। যতটা খেতে পারবেন, ততটাই প্লেটে নিন। বাড়িতে বাড়তি রান্না করবেন না। এভাবেই ধীরে ধীরে অভ্যাস বদলালেই দেশে খাবার নষ্ট হওয়া বন্ধ হবে। প্রতিদিন ভারতে কমবেশি ৫০ হাজার মিলিয়ন টন খাবার নষ্ট হয়।’
বাড়তি রান্না ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো সংস্থা নেই। তবে যেসব বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে, তাদের একজোট করার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন হর্ষ বর্ধন।
এনিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘মোদি সরকারের উদ্যোগের যে অভাব রয়েছে, তা স্পষ্ট। প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার বদলে এই সরকার নানান ইস্যু তৈরি করে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করে। মনে করিয়ে দিতে চাই, এই সরকারের আমলে যেখানে দেশে ক্রমশ ক্ষুধার্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে কংগ্রেস সরকারের আমলে ১৯০ মিলিয়ন লোককে গরিবি রেখার বাইরে আনা হয়েছিল।’
উল্লেখ্য, মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে এই ক্ষুধার সূচক তৈরি করে ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’। সবার উপরে ‘শূন্য’, এর অর্থ সেই দেশে ক্ষুধার্ত কিংবা অপুষ্টিতে ভোগা লোকজন নেই। আর সব থেকে খারাপ স্কোর হল ১০০। গত বছর ছিল ১০৩, এ বছর এক ধাপ উঠে ভারত অবস্থান করছে ১০২-তে। যা ক্ষুধা সূচকের নিরিখে অবস্থান বেশ গুরুতর। কয়েক বছর আগে পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। যা হয়েছে মোদি সরকারের আমলে, এমনই মনে করছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা।