১৯ মে লোকসভা নির্বাচনের অন্তিম পর্বের আগেই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিলো ভারতের নির্বাচন কমিশন। ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগে সমস্ত প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলো। কমিয়ে দেওয়া হল রাজনৈতিক দলের প্রচারের সময়সীমা।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনার নজর প্রথম। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাত ১০ টার মধ্যে সমস্ত প্রচার পর্ব শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। বৃহত্তম গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথম এমন সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে। অবাধ, নির্বিঘ্ন ভোটের জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানালেন উপ-নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার।
সংবিধান অনুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সমস্ত প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যান্য রাজ্যে এই বিধি বলবৎ থাকবে।
রবিবার (১৯মে) ভারতের আট রাজ্যে ৫৯টি আসনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভোট। অন্যান্য রাজ্যে আগের নিয়ম বহাল থাকলেও একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। মঙ্গলবার বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শোয়ে অশান্তির জেরে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বলে জানা যাচ্ছে।
এর আগে নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার (১৭ মে) বিকেল ৫টায়। সেই নিয়ম বদলে একদিন কমিয়ে দেওয়ায় আগামীকালই রাজ্যে শেষ হয়ে যাবে লোকসভা ভোটের প্রচার।
একইসঙ্গে ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করে সরানো হল রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে। এছাড়াও এডিজি সিআইডির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) পশ্চিমবঙ্গে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে কমিশন। উল্লেখ্য ঐ দিন অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলাতার বইপাড়া কলেজ স্ট্রিট চত্বর।
ভাঙচুর চালানো হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যাসাগর কলেজে। ভেঙে দেওয়া হয় মনীষী বিদ্যাসাগরের মূর্তি ৷ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এমন নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত কমিশনের।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এটা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নয়, এটা বিজেপি পার্টির নির্দেশ ৷ স্বরাষ্ট্রসচিব ও এডিজি সিআইডিকে অপসারিত করায় কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, একই সুরে কমিশনকে আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় কেন অমিত শাহকে 'স্যাক' করল না কমিশন?
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার মোদীর দুটো জনসভা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ৷ তাই এই বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ দিয়েছে কমিশন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকে গুণ্ডা নিয়ে এসে গেরুয়া পোশাক পরে হামলা চালিয়ে পুরো কলকাতাকে দাঙ্গার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।’
সিপিআইএম-এর তরফে বলা হয়েছে এটি নজিরবিহীন ঘটনা। বিজেপি এবং তৃণমূল এর জন্য দায়ী। প্রচার আগে বন্ধ করে দিয়ে প্রার্থীর স্বাধীনতা হরণ হলো।