ভাবুন একবার, নির্দিষ্ট একটি দিনে আপনি কলকাতা থেকে উড়োজাহাজে করে ঢাকায় যাবেন ঠিক করে রেখেছেন। সেই হিসেবে, আপনি হোটেলকে বিদায় জানিয়ে সরাসরি হাসপাতালে গেলেন। রোগীকে ছুটি করিয়ে রওনা দিলেন কলকাতা বিমানবন্দরে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে পাসপোর্ট এবং টিকিট দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। এমনকি স্ক্যানিং করে সেরে ফেলেছেন লাগেজ চেকিংও।
এখন অপেক্ষা কাউন্টার খুললে নির্দিষ্ট টাইমে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার। প্লেন ছাড়ার সময় অতিক্রম হয়ে যায়, কিন্তু বোর্ডিং কাউন্টার খুলছেই না। জানতে পারলেন, আপনি যে এয়ারলাইন্স সংস্থার টিকিট কেটেছেন ওই দিন তাদের কোনো প্লেন আকাশে উড়বে না। অথচ আপনি এ বিষয়ে কোনও কিছুই জানেন না অথবা জানানো হয়নি।
অগত্যা রোগী ফেলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন। পরে সেই এয়ারলাইন্সটির একজন কর্তৃপক্ষের দেখা পেয়ে তার কাছে খোঁজ নিতে গেলেন। কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন, 'কিছু করার নেই, অপারেশন প্রবলেম। তাই প্লেন উড়ানো যাচ্ছে না। পরের বিমানের সাথে এডজাস্ট করে দেওয়া হবে।'
গল্প মনে হলেও বাস্তবে ভারতের স্পাইসজেট এয়ারলাইন্স সংস্থাটির বর্তমান অবস্থাটা ঠিক এরকমই। শুধু আন্তর্জাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে নয়, আন্তঃরাজ্য ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা এই সংস্থাটির। মাঝেমধ্যে কপাল ভালো থাকলে আগেই জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ নতুবা বিমানবন্দরে গিয়ে জানা যাচ্ছে- নির্দিষ্ট গন্তব্যে আজকে প্লেন চলবে না।
অন্যদিকে, ভারত সরকার মেডিকেল ভিসার পাশাপাশি চালু করেছে টুরিস্ট ভিসা। ফলে ধীরে ধীরে ভারতে বাংলাদেশিদের ভিড় বাড়ছে। তা সত্ত্বেও এয়ারলাইন্সটির কোনো হেলদোল নেই। ফলে টিকিট কেটে সমস্যায় পড়ছেন বহু বাংলাদেশি। কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কারণ প্রকাশ্যে না এনে একটাই কথা জানাচ্ছে 'অপারেশন প্রবলেম'।
কিন্তু কি এই অপারেশন প্রবলেম? এ বিষয়ে এক এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞ জানান, 'উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে পাইলট, এয়ার হোস্টেস, কর্মী থেকে শুরু করে একটি স্ক্রু যদি সচল না থাকে, তাহলে প্লেন ওড়ার ক্ষেত্রে অপারেশন প্রবলেম বলে ধরে নেওয়া হয়।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'যাত্রীদের সিটের পিছনে একটি 'সিক ব্যাগ' থাকে। কোন যাত্রীর যদি উড়ন্ত প্লেনে বমি পায় সেই যাত্রী ওই ব্যাগটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু উড়ানের আগে ফাইনাল চেকিং এর সময় সিটের পেছনে ওই ব্যাগ না থাকলেও সেই প্লেনকে উড়তে দেয় না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এটিও অপারেশন প্রবলেমের অংশ। অর্থাৎ বড় থেকে যেকোন ক্ষুদ্র সমস্যার কারণে একটি প্লেন যখন আকাশে উড়তে পারে না, তাকেই অপারেশন প্রবলেম বলা হয়ে থাকে। তবে এয়ারলাইন্সগুলো কি কারণে তাদের প্লেন ওড়ানো সম্ভব হয়নি, সেটা পরে জানিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম স্পাইসজেট।
এয়ারলাইন্সটির কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যা প্রকাশ্যে না এনে ওই দুটি শব্দের মাধ্যমে এখনো পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ঢাকা-কলকাতা এবং কলকাতা- ঢাকা'র ফ্লাইট সংখ্যা খুব বেশি নয়, ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই এই সংস্থার টিকিট কাটছেন। ফলে পদে পদে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এয়ারলাইন্সটির ফ্লাইট বাতিল হওয়াতেই চাপ বাড়ছে অন্যান্য বিমান সংস্থার উপর। যার জেরে বাড়তি ভাড়া গুণেও কলকাতা-ঢাকার টিকিট পাওয়া মোটেও সহজলভ্য হচ্ছে না। কিন্তু এর সমাধান এখন পর্যন্ত বের করতে পারেনি।
একদিকে যেমনি প্লেন সংখ্যা কম অপরদিকে কবে কোন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন তার নির্দিষ্ট ডেট না পাওয়ার কারণে মানুষ অন্য এয়ারলাইন্সের প্লেনের রিটার্ন টিকিটও কাটতে পারছেন না।
তবে এরমধ্যে আশার আলো হচ্ছে ভারত সরকারের তরফে ঘোষণা করেছে, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর আন্তর্জাতিকের পাশাপাশি আন্তঃরাজ্য ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো বা করোনা পরবর্তী সময়ের মতো করা হবে। আর তা কবে হয় সে দিকেই চোখ ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশিদেরও।