পাকিস্তান লাগোয়া পাঞ্জাব, বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ক্ষমতা প্রয়োগ বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তা নিয়ে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। গত সোমবার (১১ অক্টোবর) একটি বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে বিএসএফের ‘ক্ষমতা’ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে ভারতের এই তিন রাজ্যে সীমান্ত থেকে মূল ভূখণ্ডের ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে বিএসএফ। অর্থাৎ সার্চ, বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার করতে পারবে বিএসএফ। আগে এই পরিধি ছিল মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। অপরদিকে, উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে ভারতের গুজরাট রাজ্যে বিএসএফের কাজের পরিধি। ৮০ থেকে কমিয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, পাঞ্জাব এই তিন রাজ্যে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কাজকর্মের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা এবং রাজ্যগুলির পুলিশের সঙ্গে বিএসএফের সংঘাত প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমানা রয়েছে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ অর্থাৎ দুই দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার মত জেলাগুলি এর মধ্যে পরে। ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে বিএসএফের সংঘাত আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে অভিজ্ঞমহল। ফলে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, নানা এজেন্সির মতোই এবার বিএসএফের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গের অধিকার খর্ব করতে চাইছে মোদি সরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা যশবন্ত সিনহা টুইটে লিখেছেন, ‘দিল্লিতে ভয়ঙ্কর দুটি লোক রাজত্ব করছে -ইডি, আইটি, সিবিআই, এনআইএ, এনসিবিসহ বিভিন্ন এজেন্সির সাহায্যে। সেই তালিকায় এবার বিএসএফকে অন্তর্ভুক্ত করা হল। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নরকে যাক!’
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের অধিকার খর্ব করার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেসশাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মহারাষ্ট্রের এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফ অ্যাক্ট, ১৯৬৮এর ১৩৯ ধারা অনুযায়ী, অপারেশনাল কাজকর্মের পরিধি বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। এই ধারা ২০১৪ সালে শেষবার সংশোধন করা হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে পরিধি ভিন্ন ছিল। তা এক করার জন্যই এবারের সংশোধনী। মাদক, জাল নোট পাচার এবং অনুপ্রবেশ রোধে এই সংশোধনী সহায়ক হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পাঞ্জাবে সম্প্রতি পাকিস্তানি ড্রোন ঢুকে পড়ার মত একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সেগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সেই পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবাংলায় সেই ঘটনা না ঘটলেও একই নিয়ম বাংলায় কেনও প্রযোজ্য হল?