২শ বছরের সেই পুরনো মসজিদ

মসজিদ পরিচিতি, ইসলাম

মো. নাহিদ রেজা, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-14 13:43:33

ঠাকুরগাঁও: এখনো দাঁড়িয়ে আছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সেই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি। ২শ বছরের পুরনো কারুকার্যময় এ মসজিদটি ওই এলাকার আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান হলেও জনসাধারণের কাছে এর আকর্ষণ একটুও কমেনি। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুধু এক নজর দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় জমান এই জামালপুর জমিদারবাড়ি মসজিদে। তবে স্থানীয়দের দাবি, সঠিক ভাবে এ মসজিদটির কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না।

 

গতকাল শুক্রবার (৩১ আগস্ট) মসজিদটি দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামলপুর ইউনিয়নে। সরেজমিনে দেখা গেছে, অপরূপ সুন্দর এই মসজিদটিতে সংস্কারের অভাবে ২৪টি মিনারের মধ্যে ৪টি মিনার ভেঙে পড়েছে। মসজিদের দেয়ালে আঁকা নকশা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বেহাল দশায় পড়ে আছে মসজিটি।

এদিকে মসজিদটি এখনো ব্যবহার করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। একসঙ্গে প্রায় ৪শ মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন বলে জানিয়েছেন মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন।

মসজিদের ইতিহাস: জানা যায় এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৭৮০ সালে। মসজিদটি নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তৎকালীন জমিদার আব্দুল হালিম। তবে তিনি মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তার ভাগ্য হয়নি এটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখে যাওয়ার। ১৭৮০ সালেই মারা যান জমিদার আব্দুল হালিম। তিনি মারা যাওয়ার পরে জমিদারির দায়িত্ব পান নূর মোহাম্মদ চৌধুরী। বেশ কয়েক বছর মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকলেও তা পুনরায় শুরু হয় জমিদার নূর মোহাম্মদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। বছর খানেক ভালো মতো চলে এর নির্মাণ কাজ। অতঃপর এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮০১ সালে। জমিদার নূর মোহাম্মদ চৌধুরীর ইন্তেকালের পর মসজিদটির দেখাশোনার দায়িত্ব পান তিনজন। তারা হলেন- জমিদার করিম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, জমিদার এমদাদুর রহমান চৌধুরী ও জমিদার বদি উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী।

মসজিদের বিবরণ: মসজিদটিতে ৩টি গম্বুজ ও চারদিকে ২৪টি মিনার রয়েছে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর বারান্দা ২টি। প্রথম বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১২ ফুট ৩ ইঞ্চি। দ্বিতীয় বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৯ ফুট ৫ ইঞ্চি। সামনে একটি খোলা আঙিনা রয়েছে।

মসজিদ কমিটিসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকেই এসেছেন মসজিদটির ব্যাপারে খোঁজ নিতে। তবে মুখে সকলে বলে সাহায্য করবে, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মসজিদটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই আসেন। তবে মসজিদটির সে রকম কোনো সংস্কার না হওয়ায় একটি ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। এখানে যদি সরকারি কোনো বরাদ্দ আসে তাহলে মসজিদটির জন্য অনেক ভালো হয়।’

মসজিদ কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এই মসজিদটি আমাদের জামালপুর ইউনিয়নের আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন। এর ৪টি মিনার ভেঙে গেছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলোর অবস্থা প্রায় ধ্বংসের পথে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে এখানকার মুসল্লিরা।’

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই জামালপুর মসজিদটি দীর্ঘদিন আগের। শুনেছি মসজিদের কিছু মিনার ভেঙে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি ওই ইউনিয়নের একটি আকর্ষণ। যেটি দেখতে অনেকেই আসেন। আমরা মসজিদ কমিটির সকলের সঙ্গে কথা বলে এটা সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর