পবিত্র হজ ও উমরার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো- হজ ফরজ আর উমরা সুন্নত। উমরায় হজের মতো মিনা-মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয় না। ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর পর আরাফাতের ময়দান হয়ে মুজদালিফা, মিনা ও কাবা তাওয়াফের নানা পর্ব শেষ করতে হয়।
চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে মাত্র ১০ হাজার হাজিদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে হজের। করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সৌদি সরকার গ্রহণ করেছে বাড়তি সতর্কতা। তারই অংশ হিসেবে মিনা, মুজদালিফা এবং আরাফাতের রাস্তায় বসানো হয়েছে ৬২টি চেকপয়েন্ট।
এসব চেকপয়েন্ট পেরিয়ে হাজিদের পৌঁছতে হবে নির্ধারিত এলাকায়। চেকপয়েন্টে দায়িত্বে থাকা মক্কা মোকাররমা ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র অফিসার কর্নেল তারিক আল রুবায়ান বলেন, এ বছর সীমিত সংখ্যক লোকদের হজের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর সরকারি অনুমতিপত্র ছাড়া কাউকে হজপালনের স্থানগুলোতে যেতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই কড়া নির্দেশনা জারি করেছেন।
কর্নেল তারিক বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনার পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাশায়েরে মোকাদ্দাসা বা মিনা, মুজদালিফা এবং আরাফাতের পথে বিশেষ চেকপয়েন্ট স্থাপন করেছেন। পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা সেখানে নজরদারি করা হবে।
তিনি বলেন, পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে হজের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ এসব পথ গাড়ীতে কিংবা হেঁটে অতিক্রম করতে পারবে না।
এদিকে রোববার (২৬ জুলাই) মক্কার পুলিশ এসব এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে ১৬ জনকে দশ হাজার রিয়াল করে জরিমানা করেছে।
মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সাধারণত হজের সময় হজযাত্রীরা এসব এলাকায় পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন।
এ বছর হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বায়তুল্লাহর চারপাশে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। তাওয়াফকারীরা এই ব্যারিকেড অতিক্রম করতে পারবেন না। তাওয়াফের জন্য মাতাফও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নামিরাতে নামাজের কাতারে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের দিক-নির্দেশনায় এবার হজে কাবার গিলাফ, কিংবা কাবা স্পর্শ করা, সেই সঙ্গে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর হজযাত্রীদে সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সমস্ত কর্মীর করোনা পরীক্ষা করা হবে এবং সেই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান হজ চলাকালীন বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে থাকে তাদের কর্মচারীদেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে।
হজ বিষয়ক সচিব ড. হোসাইন আল শরিফ জানিয়েছেন, হজ অফিসের প্রশাসনিক কর্মচারী এবং সরাসরি যারা হজযাত্রীদের সেবা করে থাকে, তাদের সবার করোনা পরীক্ষা হবে। যাদের করোনা নেগেটিভ আসবে, কেবল তারাই এসব কাজে নিয়োগ পাবেন।
তিনি আরও বলেন, হজযাত্রীদের দলে দলে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে হজের স্থানে পাঠানো হবে। প্রত্যেক দলের সঙ্গে দক্ষ একটি মেডিকেল টিম যাবে। করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার রোধের জন্যই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি সরকার।
-আল আরাবিয়া অবলম্বনে মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ