একজন মুমিন অন্যের খারাপ কথা ও কাজের জবাবে খারাপ আচরণ ও খারাপ বাক্য বিনিময় করবে না বরং সব সময় তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে। এ সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’। -সূরা আল ফুরকান: ৬৩
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে তোমার সঙ্গে মূর্খের মতো ব্যবহার করে, তুমি তার সঙ্গে বিজ্ঞতার সঙ্গে আচরণ করো। যে তোমার প্রতি জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করো। যে আত্মীয় তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে রাখো।’ –মুসনাদে আল বারায
অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, অন্যের সঙ্গে সবসময় ভালো আচরণ করলে চরম শত্রুও বন্ধু হয়ে যেতে পারে। তাই তো মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণকে ইবাদতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য ইসলাম ব্যক্তিভেদে ভালো আচরণের আলাদা ফজিলতের আমল বলে ঘোষণা করেছে। সেগুলো হলো-
এতিমের প্রতি ভালো আচরণ করা
এতিমদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা, তাদের সম্পদের হেফাজত করা একজন মুমিনের ওপর অবধারিত দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালা এতিমদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আর তোমরা এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং তোমরা অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করো না এবং তাদের ধন-সম্পদকে তোমাদের ধন-সম্পদের সঙ্গে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ।’ -সূরা আন নিসা: ২
এতিমদের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধায়ক বেহেশতে এরূপ থাকব। (এই কথা বলে) তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং আঙুল দু’টোর মাধ্যখানে ফাঁক করলেন।’ -সহিহ বোখারি
নারীদের প্রতি ভালো আচরণ করা
এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেন, ‘আর তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো।’ -সূরা আন নিসা: ১৯
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ অপর কোনো মুমিন নারীর সঙ্গে দুশমনি পোষণ না করে। কারণ তার একটি দিক মন্দ হলেও অপর দিক সন্তোষজনক হবে।’ -সহিহ মুসলিম
সন্তানদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা
মুমিন তার সন্তানদেরকে দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা দেবে, শিরক-বিদায়াত থেকে বেঁচে থাকার জ্ঞান শিক্ষা দেবে এবং একজন খাঁটি ঈমানদার হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করবে। হজরত লোকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নসিহত করে বলেছেন, ‘প্রিয় বৎস! আল্লাহর সঙ্গে শিরক করো না; নিশ্চয়ই শিরক হলো- বড় জুলুম।’ –সূরা লোকমান: ১৩
তিনি তার পুত্রকে আরও উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘হে আমার প্রিয় বৎস! নামাজ কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ করো এবং তোমার ওপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধরো। নিশ্চয়ই এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ -সূরা লোকমান: ১৭
এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করো এবং তাদেরকে উত্তম শিক্ষা ও ব্যবহার শিক্ষা দাও। -সুনানে ইবনে মাজা
পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও ভালো আচরণ করা
একজন মুমিনের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও সদাচরণ করা। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুণ্যকর্মের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম পুণ্যকর্ম হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি তার পিতার বন্ধুদের সঙ্গে সুআচরণ করা।’ -সহিহ মুসলিম
বড়দের সম্মান করা ও ছোটদের স্নেহ করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বয়স্ক ও জ্ঞানীদেরকে সম্মান করতেন এবং ছোটদেরকে স্নেহ করতেন। আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে বড়দের ও জ্ঞানীদের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করা। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারাই আমার কাছে (প্রথম কাতারে) থাকবে। এরপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে। তিনি তিনবার এ কথা বললেন।’ –সুনানে তিরমিজি
ছোটদের স্নেহ করা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ছোটদের স্নেহ ও মমতা করে না এবং আমাদের বয়স্কদের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে জানে না, সে আমাদের অন্তর্গত নয়।’ –সুনানে তিরমিজি
শিক্ষককে সম্মান করা
একজন মুমিনের দায়িত্ব হচ্ছে- দ্বীনের যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা এবং যার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছে সেই শিক্ষককে সম্মান করা। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা করো, দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করো, প্রশান্তি ও মর্যাদাবোধের জ্ঞান শিক্ষা করো এবং যার থেকে তোমরা ইলম শিক্ষা করো তাকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি করো।’ –আল মুজামুল কুবরা