আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়ে কিছু স্বভাবজাত গুণ দিয়েছেন। এই গুণগুলোর অন্যতম হলো- লজ্জা। ইসলামে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে অপর এক ব্যক্তিকে লজ্জা সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছিল। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তাকে ছাড়ো! কেননা লজ্জা ঈমানের অংশ।’ -আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন: ১২৭৩
হজরত যায়েদ ইবনে তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো- লজ্জাশীলতা।
লজ্জা এবং ঈমান একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যার মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানের গুণ থাকবে তার মধ্যে অব্যশই লজ্জার মতো মূল্যবান গুণও থাকবে। যার মধ্যে লজ্জা থাকবে না তার মধ্যে ঈমানও থাকবে না পূর্ণাঙ্গভাবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, লাজুকতা ও কম কথা বলা ঈমানের দু’টি বৈশিষ্ট্য। আর অশ্লীলতা ও বাচালতা মুনাফিকির দু’টি বৈশিষ্ট্য। হজরত ওমর (রা.) এর ছেলে হজরত আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঈমান ও লজ্জা এ দু’টি ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। যখন এর একটি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যায়।
লজ্জা ইসলামের প্রকৃতি
হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলাম ধর্মের বিশেষ স্বভাব হলো- লজ্জা।’ -মুয়াত্তা মালেক: ৩৩৫৯
লজ্জা মহা নিয়ামত
লজ্জা এক নিয়ামত মহা নিয়ামত। এর দ্বারা পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জিত হয়। এ জন্য একজন লজ্জাশীল চরিত্রবান মুমিন বিপুল পরিবর্তন আনতে পারেন সমাজে। শান্তি, নিরাপত্তা, কল্যাণের শোভায় শোভাশিত করতে পারেন সমাজের প্রতিটা সেক্টরে। হজরত ইমরান ইবনে হুসাই (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘লজ্জা শুধুমাত্র কল্যাণই বয়ে আনে।’ –সহিহ বোখারি: ৬১১৭
লজ্জার পুরস্কার
যেকোনো বান্দা লজ্জার গুণ অর্জন করবে তার জন্য ক্ষমা এবং অনেক বড় প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন মহান আল্লাহ। সূরা আহজাবের ৩৫ নং আয়াতে লজ্জাস্থানসহ আরও কয়েকটি গুণের আলোচনা করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের সবার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ এ মেহনত ও অর্জন বিনষ্ট হয় না মহান রবের দরবারে। রূহানি ও নৈতিক উন্নতি সাধনের অতুলনীয় উপায় মাধ্যম লজ্জাস্থানের হেফাজত।
যেসব নারী-পুরুষ ব্যাভিচার থেকে নিজেদের বিরত রাখে। সর্বদা মহান আল্লাহর জিকিরে কাটায়, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন এবং বিরাট প্রতিদান দেন। নবী করিম (সা.) কোরাইশ যুবকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, হে কোরাইশ যুব জনতা! তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থান হেফাজত কর, ব্যাভিচার থেকে বেঁচে থাক। শুনে রাখ, যে লজ্জস্থানের হেফাজত করবে তার জন্য জান্নাত।’ এ আলোচনা দ্বারা বুঝা যায়, লজ্জার বিনিময় জান্নাত। কাজ অল্প তবে পুরস্কার অনেক বড়। এ নিয়ামত অর্জন করার চেষ্টা করা দরকার, তাহলে মানুষ অনেক লাভবান হবে।
লজ্জা গোনাহের প্রতিবন্ধক
হজরত আবু মাসউদ বদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ পূর্ববর্তী নবীদের বাণী থেকে এ কথা জেনেছে যে, যখন তোমার লজ্জা নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই কর।’ –সহিহ বোখারি: ৫৭৬৯
লজ্জা প্রতিপালকের গুণ
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত লজ্জাশীল ও অন্তরালকারী। তিনি লজ্জা ও অন্তরালে থাকতে পছন্দ করেন।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৪০১৪
পর্দার সীমারেখা
লজ্জার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করতে হলে মুসলমান নারী-পুরুষ সবার পর্দার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। খারাপ জিনিস দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্তরকে লজ্জাজনক বিষয় হতে বাঁচাতে অশ্লীল বিষয় অন্তরে স্থান দেওয়া যাবে না।
যারা পার্থিব জীবনে লজ্জা-শরমের প্রতি গুরুত্ব দেবে এবং সব রকমের কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়া আখেরাতে অগণিত নিয়ামতে ভূষিত করবেন। দুনিয়াতে দেবেন ইজ্জত-সম্মান আর আখেরাতে করবেন ক্ষমা।
মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ