করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বে এক ধরণের স্থবিরতা বিরাজ করছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে করোনার কারণে সৌদি আরবে চলছে লকডাউন। উমরা বন্ধ, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে মসজিদগুলো। মক্কা-মদিনার বড় দুই মসজিদে সাধারণ মুসল্লিদের যাওয়ার অনুমতি নেই। সারা বছর লোকে লোকারণ্য থাকা জায়গাগুলোতে শূন্যতা বিরাজ করছে।
এই সুযোগে মক্কার মসজিদুল হারাম কর্তৃপক্ষ হারাম শরিফের অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পাদনে হাত দিয়েছেন। সৌন্দর্য বর্ধনে যা যা করার, সেভাবে পরিকল্পনা করে খুব যত্নের সঙ্গে কাজগুলো সম্পাদন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ করে চমৎকার ডিজাইনের ইন্টেরিয়র সিলিং সংযোজন, বিভিন্ন স্তম্ভ ও স্থানে কোরআনের কারিমের আয়াত স্থাপন করা হচ্ছে। কাজগুলো শেষ হলে তা আগতদের চোখ জুড়িয়ে যাবে।
সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বাদশাহ আবদুল্লাহ এক্সটেনশনের অসমাপ্ত কাজগুলোও শেষ করার লক্ষে কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে কিং আবদুল্লাহ গেইটের নির্মাণ কাজ গুরুত্ব সহকারে করা হচ্ছে।
পবিত্র হারামে বলতে গেলে বছরজুড়েই নানা নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলে। তবে মুসল্লিদের ভিড়ের কারণে কাজে থাকে ধীরগতি থাকে। আবার মুসল্লিরাও এটা নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। কিন্তু চলমান লকডাউনে এসব কিছুই নেই। তাই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে, শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একযোগে চলছে কাজ দ্রুতগতিতে।
মক্কা-মদিনা বিষয়ক অধিদফতরের প্রেসিডেন্ট শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার লক্ষ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। দেশটির সরকারও শায়খ সুদাইসের বুদ্ধিদীপ্ত এ পরিকল্পনার প্রশংসা করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
২০১২ সালে থেকে শায়খ সুদাইস মক্কা-মদিনা বিষয়ক অধিদফতরের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন। তার সময়কালে মক্কা-মদিনার উভয় মসজিদে ব্যতিক্রমধর্মী নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে দেশটির সরকার দুই মাস আগে ফের তার মেয়াদ বাড়িয়েছে।
পবিত্র কাবাকে ঘিরে অবস্থিত নামাজের জায়গাকে মসজিদে হারাম বলা হয়। এর ভেতরে ও বাইরে নামাজের স্থান মিলে মসজিদের বর্তমান কাঠামো প্রায় ৮৮.২ একর। এখানে একসঙ্গে ১০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদে হারামকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ এশিয়ান্স ইউকে ডটকম। ব্রিটেনের বিখ্যাত আবাসন কোম্পানি ‘হোমস অ্যান্ড প্রোপার্টি’ পৃথিবীর সবচেয়ে দামি দশটি ভবনের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তাদের তথ্যমতে মসজিদে হারামই বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও দামি স্থাপনা।
সুউচ্চ মিনার, চমৎকার ডিজাইন, উন্নত ও আধুনিক সব সরঞ্জামাদির সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদে হারামকে অনন্য দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।
সৌদি শাসন শুরু হওয়ার পর মসজিদে হারামের সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ সাধিত হয়। সাফা ও মারওয়াকে মসজিদের দালানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের শাসনামলে নামাজের নতুন স্থান এবং বাইরে নামাজ পড়ার স্থান যুক্ত করা হয়। ১৯৮৮ থেকে পুনরায় শুরু হয় সম্প্রসারণ কাজ। সুউচ্চ মিনার, নতুন ফটক, মার্বেলযুক্ত স্তম্ভ, তাপ নিয়ন্ত্রিত মেঝে, এয়ার কন্ডিশন, চলন্ত সিড়ি ও পানি নিষ্কাশনের আধুনিক ব্যবস্থা যুক্ত হয় তখন।
২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় মসজিদে হারামের চতুর্থ সম্প্রসারণ কাজ। চলতি বছর নাগাদ এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ২০১৫ সালে হারাম শরিফের সংস্কার কার্যক্রম চলাকালে কোম্পানিটির একটি ক্রেন ধসে ১০৭ জন নিহত হওয়ার পর থেকে কোম্পানিটি চাপের মুখে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় মসজিদে হারামের সংস্কার কাজ। লকডাউনের এই সুযোগে হারামাইন কর্তৃপক্ষ সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লক্ষে কাজ শুরু করেছে।
বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ মসজিদের ধারণ ক্ষমতা ২০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তার উত্তরসূরি সালমান বিন আবদুল আজিজ এই সম্প্রসারণ চালু রেখেছেন।
মসজিদের হারামের নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মুসল্লিদের চলাচল, যাতায়াত ও নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে হারামাইন কর্তৃপক্ষ সবসময়ই আন্তরিক। এ লক্ষে তারা আধুনিক সব সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন।